রোহিঙ্গাদের অপরাধের বিচারে আলাদা আদালত এবং তাদের জন্য পৃথক কারাগার করার প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় এপিবিএনের তিনটি ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করছে।
এপিবিএন সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে এই প্রস্তাব দিয়েছে। সূত্র বলেছে, আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) ‘পুলিশ সপ্তাহ’ উপলক্ষে বিচারকদের সঙ্গে অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। এদিকে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের আলাদা কারাগারে রাখতে কারা অধিদপ্তরও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের জন্য মালয়েশিয়ার সেন্ট্রাল রিহ্যাবিলিটেশন প্রিজনের (সিআরপি) আদলে উন্মুক্ত কারাগার করতে চায় অধিদপ্তর।
আইনজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গা অপরাধীদের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল করতে হলে আইন করতে হবে। আলাদা কারাগারের জন্যও কারাবিধি পরিবর্তন করতে হবে।
এপিবিএন সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নিশাত এ্যাঞ্জেলা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় ১২ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার বসবাস। রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, অন্যান্য সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে। দেশের প্রচলিত আইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার বিচার চলছে। এই বিচার ত্বরান্বিত করতে কক্সবাজারে পৃথক আদালত, এজলাস বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া কারাগারে দেশের অপরাধীদের সঙ্গে রোহিঙ্গা অপরাধীদেরও রাখা হচ্ছে, যা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি কমাতে কক্সবাজারে আলাদা কারাগারে রোহিঙ্গাদের রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মামলার বিচার আলাদা আদালতে হলে বিচারকাজ দ্রুত শেষ হবে। এতে রোহিঙ্গাদের অপরাধ কমবে। পুলিশের কর্মকর্তারা মনে করেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সব অপরাধের নেপথ্যে মাদক। কোনো অপরাধ ঘটলে রোহিঙ্গারা মামলার বাদী হতে চায় না, সাক্ষ্য দিতেও চায় না। এ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় পুলিশকে।
এপিবিএনের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অপরাধের ধরন ও আচরণ ভিন্ন। ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমন্বিত নিরাপত্তাব্যবস্থা ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে মামলার তদন্ত, গ্রেপ্তার ও সাক্ষী অন্যতম। এ জন্য আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’
উন্মুক্ত কারাগার করতে চায় কারা অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, কারা অধিদপ্তর রোহিঙ্গা বন্দীদের জন্য মালয়েশিয়ার সিআরপির আদলে পৃথক ও উন্মুক্ত কারাগার করতে চায়। কক্সবাজার কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রোহিঙ্গাদের সেখানে রাখা হবে। বন্দীরা প্রতি মাসে একবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটি পাবেন। ছুটি শেষে আবার কারাগারে ফিরতে হবে। সেখানে কারারক্ষী, পুলিশ ও বেসরকারি সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করবে। মালয়েশিয়ায় অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীদের সিআরপিতে রাখা হয়।
রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা কারাগার নির্মাণে কারা অধিদপ্তরকে উখিয়ার হলদিয়া পালংয়ের পাগলীবিল এলাকায় ১৬০ একর খাস জমি বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে এতে আপত্তি জানিয়ে বন বিভাগ কারা অধিদপ্তরকে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে বলেছে। কারা অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, বরাদ্দ পাওয়ার পর অধিদপ্তর ওই জমির খাজনা দিয়েছে। জমির চারপাশে শিগগির সীমানা দেয়াল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১০ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা কারাগারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৯০০ বন্দী ধারণক্ষমতার ওই কারাগারে ৩ হাজার ৭০০-র বেশি বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রোহিঙ্গা হাজতি ৬৫০ জন এবং কয়েদি বা সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ২৩ জন। রোহিঙ্গাদের আলাদা সেলে রাখা সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গাদের স্বজনেরা ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে কারাগারে মাসে এক দিন দেখা করতে পারেন। উখিয়া নিউজ ডটকম।
কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার মো. শাহ আলম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারা অধিদপ্তরকে দেওয়া জমিতে উন্মুক্ত কারাগার হলে সেখানে রোহিঙ্গাদের আলাদা রাখার সব ব্যবস্থা করা হতে পারে। পাশাপাশি তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে তা সময়সাপেক্ষ।
আইনজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গারা শরণার্থী না অনুপ্রবেশকারী, আগে তা নির্ধারণ করতে হবে। ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধের বিচার আলাদা আদালতে করতে চাইলে আইন করতে হবে। বর্তমান আইনে আলাদা কোনো ট্রাইব্যুনাল করে বিচার করা যাবে না। আলাদা কারাগারে রাখতে হলেও কারাবিধির পরিবর্তন করতে হবে। এগুলো সবই সম্ভব। সুত্র’ আজকের পত্রিকা
পাঠকের মতামত