মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলমানদেরকে শতাব্দীর জঘন্যতম গণহত্যার কথা উল্লেখ করে আইআইইউসি’র প্রক্টর ড. শফিউদ্দীন মাদানী বলেন, “মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। শিশু, নারী, পুরুষদেরকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।”
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল ক্লাবের আয়োজনে অদ্য ২৬ নভেম্বর দুপুর বারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে মায়ানমারে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে র্যালী ও মানব বন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
শফিউদ্দীন মাদানী বলেন, “আমাদের আজকের কর্মসূচী তাদের বিরুদ্ধে যারা নিরীহ শিশু এবং নারীদেরকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্চেদ করে সাগরে-জঙ্গলে বনবাসে দিয়েছে। যারা পেট্রোল দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ।” বিশ্বের নির্বিকারত্বের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “যেখানে কোন দেশের হাতী খাদে পড়ে গেলে আমাদের টেনশনে ঘুম হয়না, সেখানে হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করার পরও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ নীরবতা পালন করছে”।
তিনি আরো বলেন, “মাননীয় প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়ে দিতে চাই এবং আবেদন করতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যেভাবে সীমান্ত খুলে দিয়ে এদেশের সর্বস্থরের মানুষের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন, ঠিক সেভাবে আজকে আমরা প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার আহবান জানাচ্ছি”।
এছাড়াও তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ সকলকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের চিকিৎসা, খাবার-দাবারসহ যাবতীয় সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মানব বন্ধনে উপস্থিত হয়ে CENURC ডিপার্টমেন্টের হেড ড. মুফিজুর রহমান আল-আজহারী। তিনি বলেন, “কোথাও যখন একটি কুুকুর মারা যায়, তখন বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা তাদের চোখের পানি দিয়ে বুক ভিজিয়ে দেয়, বাক স্বাধীনতার জন্য বিশাল বিশাল সেমিনার হয়, কনফারেন্স হয়; কিন্তু আজকে যখন মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে হাজার হাজার মুসলমান নারী-পুরুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে, ছোট্ট ছোট্ট মাসুম বাচ্চাদেরকে মায়ের সামনে জবাই করা হচ্ছে, মা-বাবার সামনে মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, জীবন্ত মানুষগুলোর গা থেকে চামড়া তুলে নেয়া হচ্ছে তখন বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুরো নীরব, নির্বিকার। আমরা তাদের দুনিয়ার সমস্ত ভাষায় ধিক্কার জানাই। আজকের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মম-নিষ্ঠুর অত্যাচার দেখেও তারা নীরব”। আল আজহারী মুসলিম বিশ্বের নীরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্বে মোট ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্র আছে। কিন্তু তাদের কণ্ঠও আজ রহস্যজনকভাবে নীরব”।
ছাত্র প্রতিনিধি হামেদ হাসান এলাহীর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া ফ্যাকাল্টির ডীন ড. নাজমুল হক নদভী, ইবি ডিপার্টমেন্টের এসিসট্যান্ট প্রফেসর নেজাম উদ্দীন, বিবিএ ডিপার্টমেন্টের এসোসিয়েট প্রফেসর এমদাদ হোসাইন, আইআইইউসি কালচারাল ক্লাবের সহ-সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী।
উক্ত মানব বন্ধন ও র্যালি কর্মসূচীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে সাধ্যানুযায়ী মিয়ানমারে চলমান হত্যাযজ্ঞের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে আহবান জানান।