নিউজ ডেক্স::
[caption id="attachment_17040" align="alignleft" width="643"] ঠেঙ্গারচর[/caption]
রোহিঙ্গাদের বঙ্গপোসাগরে অবস্থিত হাতিয়ার ঠেঙ্গারচর দ্বীপে স্থানান্তরে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোববার বিদেশী কূটনীতিকদের ডেকে ওই সহায়তা চান। এ সময় উপস্থিত কূটনীতিকরা এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিয়ানমারের শরনার্থী এবং মিয়ানমারের অবৈধ নাগরিকদের বিষয় নিয়ে কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের অবহিত করেন।
বিকাল তিনটার পরে শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। প্রায় ৬০ জন রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, মিশন প্রধান এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দফতর, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল নাসের চৌধুরী এবং পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহিদুল হক।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের শরণার্থী এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অবহিত করেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা ৬৯ হাজারসহ রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে অবস্থানরত মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা চার লাখের বেশি। তারা কক্সবাজারে দু’টি শরণার্থী শিবির এবং খুপরি ঘরে বাস করছেন।
এ সময় মন্ত্রী ইতিপূর্বে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে সফলভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিপুল সংখ্যক মিয়ানমারের নাগরিকের উপস্থিতির ফলে কক্সবাজারে তাদের আবাসন কীভাবে সামাল দেয়া হচ্ছে তা তোলে ধরেন। এক্ষেত্রে তাদের মানবিক সহায়তার ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এছাড়াও, কক্সবাজার ও পাশ্ববর্তি জেলাগুলোতে সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা, রাজনীতি, জনসংখ্যার ঘনত্ব, পরিবেশগত, মানবিক ও নিরাপত্তার বিরুপ প্রভাব ফেলছে।
ইকো-ট্যুরিজমের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তার প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই জনগোষ্ঠীর দুরাবস্থার কারণে সেখানে মানবপাচার ও মাদকপাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের শরনার্থী ও নাগরিকদের অবস্থানের কারণে এমনিতেই কক্সবাজার জেলা চাপের মধ্যে পড়েছে। তার ওপর নতুন করে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি কর্তৃপক্ষের জন্যে বাড়তি চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।
এ পরিস্থিতিতে তাদের জন্যে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে তাদেরকে বঙ্গপোসাগরে হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এর ফলে মিয়ানমারের শরণার্থী এবং মিয়ানমারের নাগরিকরা অপেক্ষাকৃত ভাল মানবিক সহায়তা পাবেন।
মন্ত্রী অবহিত করেন যে, ঠেঙ্গারচরকে বসবাসের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার সেখানে আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মসজিদ, সড়কসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন হওয়ার পরই শুধু রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে। তিনি জানান যে, স্থানটিকে বসবাসের উপযুক্ত করার পর কূটনৈতিক সম্প্রদায় ওই স্থান পরিদর্শনে যেতে পারবেন।
এক্ষেত্রে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয়, জাতিসংঘ এবং অপরাপর অংশিদারদের রোহিঙ্গাদের জন্যে আবাসস্থলের উন্নয়নে এবং স্থানান্তরে সহায়তা করার জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে এটাকে অস্থায়ী আবাসস্থল হিসাবে উল্লেখ করে তাদের মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন।
কূটনৈতিক কোরের ডীন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত, মার্কিন রাষ্ট্রদূত, সৌদি রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী এই জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া এবং তাদের মানবিক সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ভূয়ষী প্রশংসা করেন।
সৌদি রাষ্ট্রদূত তার দেশে মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয়দান এবং বাংলাদেশে মিয়ানমারের নাগরিকদের সহায়তার কথা তুলে ধরেন।
কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সাধারনভাবে এই স্থানান্তর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পর তাতে তাদের সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, এ পদক্ষেপ তাদের বসবাসের পরিবেশের উন্নতি ঘটাবে। কূটনৈতিক সম্প্রদায় এটাও বলেন যে, এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলো মিয়ানমারে তাদের নিজ গৃহে ফিরে যাওয়া। তাদের এই ফেরত পাঠানোর কাজে কূটনৈতিক সম্প্রদায় সহায়তার আগ্রহের কথা জানান।