বাংলাদেশ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ হয়ে এ পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ হাজার রোহিঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত হয়েছেন। মানবিক কারণে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে পুর্নবাসন করা হলেও তৃতীয় কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পাঠানো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক শরণার্থীবিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাকেঞ্জি রো আজ বুধবার দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
২০ জুন আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, আঞ্চলিকভাবে এ পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সামনে হয়তো আরও রোহিঙ্গাকে নেওয়া হবে। তবে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।
প্রসঙ্গত, মানবিক কারণে বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও মিয়ানমারের অবনতিশীল পরিস্থিতির কারণে তাঁরা দেশে ফিরতে পারছেন না। কক্সবাজারের শিবিরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি মানব পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়ে রোহিঙ্গারা সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন ঝুঁকি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সহায়তাকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন যেকোনো কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে। তাই আমাদের সহায়তা যাঁদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাঁরা যেন পান, সেটা নিশ্চিত করতে আমরা অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা নিয়েও কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ম্যাকেঞ্জি রো। জবাবদিহি নিশ্চিত করাটা আইনের শাসন দ্বারা চিহ্নিত একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের অপরিহার্য ভিত্তি বলে মন্তব্য করেন তিনি। ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ম্যাকেঞ্জি রো জানান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তার সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও জাতিগত নিধনের ফলে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। ২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তা প্রায় ২৪০ কোটি ডলার ছুঁয়েছে। এই তহবিলের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র ১৯০ কোটি ডলার দিয়েছে।
পাঠকের মতামত