গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে দেশটি রাজি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরও সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জাপানে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে থাকাকালে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) টোকিওতে জাপানের পাবলিক ব্রডকাস্টার এনএইচকে-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্রে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে টোকিও ছেড়েছেন।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য শরণার্থী শিবির পরিচালনার খরচ বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২০২৬ সালের মধ্যে জাপানের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পন্ন করতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তরুণদের একটি বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশাল বাজার রয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর ক্ষোভ জাতিসংঘের
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত মিয়ানমারের জন্য আর অর্থ ব্যয় না করে সেই অর্থ বাংলাদেশের শরণার্থীদের দিতে বলেছেন জাপানকে৷
বার্তা সংস্থা এএফপির এক খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর জাপানকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত টমাস অ্যান্ড্রুস৷ তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে জাপান রাশিয়ার ওপর যেমন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তেমন করেই তাদের মিয়ানমারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত৷ তিনি মিয়ানমারের সেনাদের নিয়ে জাপানের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন৷
তিনি জাপানের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা জাপানের সহায়তায় কমব্যাট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং শিখছে কী করে দক্ষ সৈনিক ও কমান্ডার হওয়া যায়৷ এবং তারা সেই সেনাবাহিনীতে ফিরবে, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধপরাধে দায়ী৷ যতদিন জাপান এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ না করবে, ততদিন তারা বর্বর সামরিক শাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে৷
জাতিসংঘ দূত বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে জাপানের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক৷ অভ্যুত্থানের আগে জাপান ছিল তাদের অন্যতম প্রধান সহায়তা প্রদানকারী ও সেইসাথে বিনিয়োগের উৎস৷ এইসব সহায়তা তিনি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নতুন খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছেন জাপানকে৷
জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশে এখন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে৷ তাদের জন্য চলতি বছরে প্রয়োজন ২৮৫.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে চাহিদার মাত্র ১৮ ভাগ৷ আর কয়েক বছর ধরেই চাহিদার ৬০-৭০ ভাগের বেশি সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না৷
জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বলছে, ২০২২সালে ২৮৫.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ২০০মিলিয়ন ডলার৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন ডোনারদের চোখ ইউরোপের শরণার্থীদের দিকে৷
এদিকে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিতে ব্যয় করেছে ১০০ কোটি টাকা৷ দুই হাজার ৩১২ টাকা খরচ করেছে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণে৷ আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল জনশক্তি নিয়োগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে নিজস্ব অর্থায়নে৷
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ ইয়াবা প্রবেশ করে মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে৷ ইয়াবার চালানের ৭০ শতাংশই মজুদ করা হয় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে৷ এরপর সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে৷ ২০২২ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে অন্তত ২৫ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন৷ ওই সময়ে বিভিন্ন অপরাধের কারণে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে অন্তত এক হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা গ্রুপে সংঘাত ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে৷ রোহিঙ্গাদের এই অপরাধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। সুত্র: ঢাকা মেইল