ডেস্ক রিপোর্ট- রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ও ভাসানচরে স্থানান্তর- এ তিন বিষয় নিয়ে চিন্তিত সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে খোঁজখবর রাখছেন। প্রতিদিন আপডেট নিচ্ছেন।
আজ বিকাল তিনটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে তিন বিষয়ে আলোচনা করতে এক জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
এতে পুলিশের আইজি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের প্রধানরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে অনেক রোহিঙ্গা শিবিরের বাইরে তাদের ইচ্ছামতো সুবিধাজনক স্থানে ঝুপড়ি বানিয়ে বসবাস করছে।
আবার শিবিরগুলোতেও আছে প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গাসহ বেশকিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তারা বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে সহজ সরল রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা অনৈতিক কাজে প্ররোচিত করছে। ফলে দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে শিবিরগুলোতে।
গত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দ্বন্দ্ব বা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক জন নিহত হন। গত জুনে রোহিঙ্গাদের নেতা আরিফ উল্লাহ নিহত হন। আরিফ উল্লাহ বালুখালি ক্যাম্প থেকে পালংখালি যাচ্ছিলেন। পথে কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে ছোট ছোট সংঘর্ষের ঘটনা লেগেই আছে। ছোটখাটো ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। ফলে কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আগস্ট থেকে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আগে আসা রোহিঙ্গাদেরসহ এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩০টি ক্যাম্পে বসবাস করছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এসব এনজিওর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের উস্কে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে।
এনজিও ছাড়াও সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডব্লিউএফপি, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন সংস্থা মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। এদিকে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় একটি ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’ হাতে নিয়েছে।
প্ল্যান অনুযায়ী, আগামী ১০ মাসে (ডিসেম্বর পর্যন্ত) বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন হবে ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এ অঙ্ক দাঁড়ায় সাত হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিরাট অঙ্কের এ অর্থ কীভাবে যোগাড় করা হবে এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলোচনা হতে পারে।
এর আগে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, কক্সবাজারের আশ্রয় কেন্দ্র থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে শিগগিরই ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর ভাসানচর কতটুকু প্রস্তুত ওই সম্পর্কেও সভায় আলোচনা হতে পারে।
এদিকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিয়ে এ বৈঠকের পর বিকাল সাড়ে চারটায় মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বিষয়ে পর্যালোচনা হবে। একই বৈঠকে বিদেশি দূতাবাসগুলোকে উন্নয়ন মেলার’ সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।