বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন করে সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তহবিল নিয়ে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে সে দেশ ছেড়েছেন ৬০ লাখেরও বেশি নাগরিক। তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনের শরণার্থীদের খাদ্য ও বাসস্থানে সহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ইউক্রেনের শরণার্থীদের সহায়তার দিকে বেশি ঝুঁকছে। সে কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশে কি কি প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির কাছে পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শরণার্থী বাড়ায় রোহিঙ্গাদের তহবিলে সংকট হতে পারে। এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি বছর যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) কর্মসূচি সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে থাকে। চলতি বছর সেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮১ মিলিয়ন মর্কিন ডলার। এ পর্যন্ত মাত্র ২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রæতি পাওয়া গেছে। আর প্রতি বছর জেআরপি’র চাহিদার ৭০ শতাংশ তহবিল পাওয়া যায়। ফলে এ বছর থেকে তহবিল সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছেন। সফরকালে তিনি রোহিঙ্গাদের তহবিল নিয়ে সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি শুধু ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্যই এ সংকটের কথা বলেননি। একই সঙ্গে আফগানিস্তানের শরণার্থীদের জন্যও রোহিঙ্গা সহায়তা তহবিলে টান পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন থেকেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা হঠাৎ করে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। ভারতে ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। সীমান্ত পেরিয়ে তারা এখন বাংলাদেশে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের প্রবেশে উদ্বেগ জানিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারতের প্রতি আহŸানও জানিয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, রোহিঙ্গারা ভালো খাওয়া দাওয়ার আশায় ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। তারা বলে, বাংলাদেশের ক্যা¤েপ ভালো খাবার দিচ্ছে। ভারতে তারা কষ্টে আছে। তাই তারা বাংলাদেশে চলে আসছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ভারত থেকে কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চাইলে তাদের পুশব্যাক করা হবে। এ বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ইত্যাদি দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মতো সদয় হওয়ার জন্য এসব দেশের সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তিনি।