মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, অভিযোগ আছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও উগ্রবাদীদের অর্থায়ন করে। এজন্য রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও’র ব্যয়ের হিসাব চাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বার বার চিঠি দিয়েও সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে বার বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিঠি দিয়েছে, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাই আমরা চাই, এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অফিস বাংলাদেশে স্থাপিত হোক, যাতে আমরা প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকে মিথ্যাচার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য কত টাকা আসলো সেটা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখি। সেখানে একজন রোহিঙ্গা ১২ ডলার করে পায়। এরপর কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার বাইরে কিছু খরচ করে কি না। কারণ অভিযোগ আছে তারা উগ্রবাদীদের অর্থায়ন করে। সেই অভিযোগ তদন্ত করার জন্য এটা লাগবে। আইনানুগভাবে যেটা সম্ভব তাদের হিসাবপত্র জানতে চাওয়া হবে। তারা কত টাকা পেলো তার স্টেটম্যান্ট দিতে হবে। একই সঙ্গে কত টাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করে, আর কত টাকা বিতরণের সময় কর্মকর্তাদের ব্যয় কত, সে হিসাব দিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর টাকা-পয়সার হিসাব নেওয়ার উদ্যোগ আগেও নেওয়া হয়েছিল, এখন আবার কেন, নাকি এটা ফলোআপ করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যারা ফান্ডিং করে তাদের কাছে হিসাব চাওয়ার আমার এখতিয়ার নেই। সচেতনতার জন্য আমরা তাদের জানিয়েছি, যেসব টাকা দেওয়া হয় তার সঠিক ব্যবহার হলে সবাই উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, যে ফান্ড আসে সেটা ১২ লাখ দিয়ে ভাগ দিলে বের হয়ে আসে। এর মধ্য থেকে ২৫ শতাংশ তাদের বিভিন্ন ব্যয় রয়েছে সেটা বাদ দেন, তাহলে তো মূল কত টাকা দেওয়া হচ্ছে সেটা বেরিয়ে যাবে। বাকি ৭৫ ভাগ টাকা রোহিঙ্গাদের কাজে ব্যয় হয় কিনা, সেটা তদন্ত করে দেখার জন্য হিসাব চাওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশে এখন আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে। এজন্য আমরা সন্তোষ প্রকাশ করেছি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আত্মরক্ষার জন্য মারমুখী হয়ে থাকবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি এগুলোর প্রমাণসহ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে তাদের সচেতন করে দেওয়া হয়েছে। তারা যাতে এমন কোনো কিছু না করে যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
আসন্ন রমজানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে আমরা খুব সচেতন। একই সঙ্গে খাদ্যে ভেজাল রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যাতে অভাব না ঘটে এবং সরবরাহ যেন প্রচুর পরিমাণে থাকে সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যের দাম যেন ঠিক থাকে ও সরবরাহও যেন স্বাভাবিক থাকে সরকার সে বিষয়ে প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটা নাগরিকের অধিকার আছে সম্মান আছে। যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহেতুক মিথ্যাচার করে। আমরা তো এসব মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলিনি। বলা হয়েছে, যারা মিথ্যাচার করছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারণ যে করছে সে অন্য কোনও দেশে বসে এসব মিথ্যাচার করছে। এজন্য আমাদের দেশে এসব সামাজিক মাধ্যমের অফিস করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা তাদের বহুবার চিঠি দিয়েছি। তারা যে উত্তর দিয়েছে সেটা আমাদের কাছে যথাযথ মনে হয়নি। আর তাদের আমরা কোনও লাইসেন্স দেই না। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তারা শুধু আমাদের ঘোরাচ্ছে। আমরা চাচ্ছি এটা যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।
তিনি বলেন, মাদক কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কলাকৌশল বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী ও পাচারকারীদের তালিকা করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সেসব তালিকা ক্রস চেক করা হবে। তারপর আমরা একটি স্থায়ী তালিকা করবো। কারণ পৃথিবীর সব দেশেই যারা এসব তাদের একটা তালিকা থাকে। সব সংস্থাই আলাদা আলাদা তালিকা করবে পরে সমন্বয় করা হবে। তবে এ তালিকা প্রকাশ করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি রিপোর্ট দিয়েছে আমাদের দেশে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র আসছে। এর মধ্যে অনেকে জাল লাইসেন্স তৈরি করে এনেছে। এসব বিষয়ে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। আর যেসব অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র আছে সেখানে সুনির্দিষ্ট চোরাকারবারির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করবে। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন অন্য কোনও ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত