বিবিসি::
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান সমর্থিত রোহিঙ্গা ভিশন নামে একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি ভিডিওচিত্রে, কিছু আগুনে পোড়া মৃতদেহ এবং এগুলোকে ঘিরে তাদের স্বজনদের আর্তনাদ করতে দেখা গেছে।
ভিডিওটির বিস্তারিততে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের মংডুর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামে গত ১৩ই নভেম্বর ৯ জন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলে দেশটির সেনাবাহিনী।
ওই দিনের পর থেকে ওই গ্রামের আরো ৯০ জন নারী-পুরুষ-শিশুর সন্ধান আজো পাওয়া যায়নি বলেও এতে উল্লেখ রয়েছে।
এলাকাটি বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে খুব কাছে।
ভিডিওটিকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
তবে এতে যাদেরকে দেখানো হয়েছে তাদের ভাষা অনেকটা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এলাকার আঞ্চলিক ভাষার মতই।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন সময়ে এরকম ভাষাতে কথা বলতে দেখা গেছে।
ভিডিওতে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তিনটি মৃতদেহও দেখানো হয়।
মৃতদেহগুলোর আকার দেখে বোঝা যায় এগুলো মানুষের মৃতদেহ, তবে পরিচয় উদ্ধারের কোন উপায় নেই।
ভিডিওতে একটি মৃতদেহের পাশে বসে দুই মহিলাকে কাঁদতে দেখা যায়।
এক মহিলা মৃতদেহটির মুখে হাত বোলাচ্ছিলেন এবং বিলাপ করছিলেন।
পাশেই ছিল আরো একটি মৃতদেহ।
ভিডিওচিত্রটিতে একজন ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন, সম্ভবত ভিডিওটিও তিনিই ধারণ করছিলেন।
তাকে দেখা যায়নি।
তবে তিনি বলছিলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ১৩ই নভেম্বর এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
গত অক্টোবর মাস থেকেই রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।
এই অভিযানে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা, মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক ভিত্তিক অভিযোগ আছে।
সেনাবাহিনী বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
টানা অভিযোগের এক পর্যায়ে তারা সম্প্রতি শুধুমাত্র ৬৯ জন 'বাঙ্গালী' এবং 'সহিংস হামলাকারী'কে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
'রোহিঙ্গা ভিশন টিভি' নামে এই ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশিত ভিডিওটিকে যাচাই করা না গেলেও মিয়ানমারের একটি সুপরিচিত ইংরেজি দৈনিক 'নিউ লাইট অব মিয়ানমার'-এ এই রোহিঙ্গা ভিশন নামক ওয়েবসাইটটির উল্লেখ রয়েছে।
পত্রিকাটির শনিবারের খবরে দেশটির কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা ভিশন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক একটি সংস্থা যেটি কর্তৃপক্ষের ভাষায় 'আন্তর্জাতিক চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে লিপ্ত'।
নিউ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে আরো বলা হয়, কর্তৃপক্ষ রাখাইন প্রদেশে তদন্ত করে এমন একজন যুবকের খবর পেয়েছে যে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবে 'চরমপন্থি'দের কাছে 'মিথ্যা' ও 'অবমাননাকর' খবর প্রচার করে।
রামাউক টুলা (২১) নামের এই যুবকের কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়ার কথাও ওই খবরে বলা হয়েছে, যেখানে 'বাংলা' ভাষায় নানা বক্তব্য ধারণ করা আছে।
এই মোবাইলের ভাইবার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ভিশন-সহ বিদেশী নানা সংগঠনের কাছে তথ্য প্রেরণের প্রমাণেরও উল্লেখ রয়েছে খবরটিতে।
গত অক্টোবরে এক পুলিশ চেকপোস্টে সমন্বিত হামলার জের ধরে রাখাইন প্রদেশে ব্যাপক ভিত্তিক সেনা অভিযান শুরু হবার পর থেকেই ওই এলাকায় সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
ফলে ওই এলাকায় আদপে কী ঘটছে তার প্রকৃত তথ্য জানা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।