মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করে এ সংকট সমাধানে এশিয়ার নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৭ মে) এশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে টোকিওতে অনুষ্ঠিত ২৭তম আন্তর্জাতিক নিক্কেই সম্মেলনে দেওয়া ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। এ সম্মেলনের থিম ‘বিভক্ত বিশ্বে এশিয়ার ভূমিকা পুনঃসংজ্ঞায়িত করা।’
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনটি জাপানের রাজধানী টোকিওতে স্ট্রিমিং এবং অন-সাইট উপস্থিতি উভয়ক্ষেত্রেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কারণ অনুষ্ঠানটি এই বছরের সম্মেলনের সঙ্গে একটি হাইব্রিড বিন্যাসে হচ্ছে, যার শিরোনাম হচ্ছে ‘বিভক্ত বিশ্বে এশিয়ার ভূমিকা পর্যালোচনা করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দেশটির ১১ লাখ নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে এসব রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠাতে হবে। এ সংকটের বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে অবদান রাখতে ও সহযোগিতা করতে সবাইকে অনুরোধ করছি।’
সবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে।
বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি-সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সবার সঙ্গে কাজ করার মনোভাবের কথা উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরস্পরকে সহায়তা করতে আমাদের ভালো অনুশীলন, জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাগ করে নিতে হবে এবং এজন্য আমাদের শক্তিগুলোকে সমন্বয় করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ টেকসই বিশ্ব এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই ও সমৃদ্ধ এশিয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সবসময় সব বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এশিয়া হলো বিশ্বের বৃহত্তম ও জনবহুল মহাদেশ। বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ এশিয়ায় বাস করে। বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের বসবাসও এখানে। তাই শান্তি নিশ্চিত করতে বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন করা অপরিহার্য। শুধুমাত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করেই এশিয়ার দেশগুলো মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ থাকব যদি জাপান এবং অন্যান্য ওসিডি’র দেশগুলো কমপক্ষে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকার সুবিধাগুলো প্রসারিত করে। যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জন আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধুদেশ ও অংশীদারদের প্রতি ২০২৬ সালের পরও বর্ধিত সময়ের জন্য বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং জাপানসহ অন্যান্য দেশের সাথে এফটিএ এবং সিইপিএ নিয়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আতিথ্য দিচ্ছে এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিজ বাসভূমে নিরাপদ, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে ফেরত পাঠাতে হবে। আমরা এ সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা খুঁজে পেতে অবদান রাখতে এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি।’
এশিয়াকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও জনবহুল মহাদেশ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এখানে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ বাস করে। এটি বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষেরও আবাসস্থল।’
‘অতএব, আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়ে বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শুধুমাত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করেই এশিয়ার দেশগুলো জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পন্থা অনুসরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যৎ এশিয়া গড়ার জন্য সম্মেলনে পাঁচটি ধারণা শেয়ার করে বলেন, ‘আপনাদের প্রতিফলনের জন্য কিছু ধারণা আপনাদের সাথে শেয়ার করে করছি।’
শেখ হাসিনা তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, ‘এশিয়ার দেশগুলোকে একে অপরের প্রতি বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এবং বিভাজন মোকাবিলায় সংহতি প্রচার করতে হবে।’
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রস্তাবে, তিনি বলেন, ‘কীভাবে আইসিটি’র সফ্ট পাওয়ারকে আমাদের দেশ এবং এশীয় দেশগুলো ন্যায্যতা, সম্মান, ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তি এবং অন্তর্ভুক্তি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার মধ্যকার ব্যবধান পূরণের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে পারে। আমাদের কাজের মধ্যে সমতা আনয়ন করতে পারে এবং তারা তা অন্বেষণ করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী তার চতুর্থ এবং পঞ্চম ধারণার বর্ণনা করার সময় অভিমত ব্যক্ত করেন যে এশিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করবে টেকসই ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার উন্নতি এবং উভয়পক্ষের জন্য সুবিধাজনক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ওপর এবং এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং তাদের তা ঐক্যবদ্ধভাবে এবং সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা উচিত।