সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প সহ বিশাল বস্তি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। কোন নীয়মনীতির বালাই না থাকায় দিন দিন এসব রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়েছে পড়ছে। নতুন আসা রোহিঙ্গারা প্রতিদিন কিনছে বাংলাদেশী বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল সিম। কুতুপালং রোহিঙ্গা বাজারে যেন ধুম পড়েছে সিম কেনার। প্রায় প্রতিটি মোবাইলের দোকান থেকে ভুয়া বায়োমেট্রিক করা সিম কিনছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় সিম এজেন্টদের ম্যানেজের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড দিয়ে করা এসব সিম ব্যবহৃত হচ্ছে অপরাধমুলক কর্মকান্ডে। এসব সিম দিয়ে তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিজন রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশী সিম থাকা ছাড়াও কুতুপালং ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে প্রায় ৫ শতাধিক ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের মাধ্যমে রোহিঙ্গা যুবকেরা অতিরঞ্জিত করে অবাধে তথ্য পাচার করছে বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ, আনসার বাহিনী থাকলেও তাদের সাথে রোহিঙ্গাদের সখ্যতা গড়ে ওঠায় ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে ক্যাম্পের ভিতরে-বাহিরে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ওইসব অপতৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এখনই সময় বলে মনে করেন সচেতন মহল।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,মিয়ানমার থেকে সেদেশের সেনাবাহিনী পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনে শিকার হয়ে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের বিচরন সর্বত্র। কোন নিয়ন্ত্রন নেই,যে যার মত করে স্বাভাবিক চলাফেরা করছে,কেউ রাস্তার ধারে বসে সাহায্য পাতছে,কেউ বনবিভাগের জায়গায় বস্তি নির্মান করছে। তবে বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা সর্বাঙ্গে মোবাইল কিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অপারেটরের সিম কিনে নিচ্ছে। কুতুপালং বাজারের প্রায় ১০ টি স্থানে কোন আইডি কার্ড ছাড়ায় রোহিঙ্গাদের সিম বিত্রিু করছে দোকানীরা। বিত্রিু করা বেশীর ভাগ সিম রবি ও গ্রামীন ফোনের। ভুয়া বায়োমেট্রিক করা সিমগুলো দামে একটু বেশী হলেও রোহিঙ্গাদের কাছে তা সোনায় সোহাগা। কারন কোন আইডি কার্ড ছাড়া সিম কিনে তারা দেশ বিদেশে থাকা আত্বীয় স্বজনদের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। শুধু নতুন আসা রোহিঙ্গাদের হাতে ভুয়া সিম যাচ্ছে তা নয়,এসব সিম ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ল্যাবটব ও কম্পিউটারে। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, ‘ই’ বকের নুরুল হকের পুত্র নুর মোহাম্মদ, আবুল হাসেমের ছেলে মিজান কম্পিউটার নিয়ে ইন্টারনেটের কাজ করছে ক্যাম্পের ভিতরে কয়েকটি দোকানে।এসব দোকান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিদেশের বিভিন্ন চ্যানেলে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভুয়া তথ্য পাচার করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সহ বিভিন্ন সংস্থা সমুহের অফিসে। ইংরেজীতে পারদর্শী এসব রোহিঙ্গারা যে কোন তুচ্ছ ঘটনাকে বিকৃত করে আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরছে। ফলে ক্ষুন্ন হচ্ছে দেশের ভাবমুর্তি। কুতুপালং ক্যাম্পে যারা কম্পিউটার নিয়ে ইন্টারনেটে তথ্য পাচার করার অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে এনাম, হেলাল উদ্দিন, আব্দুল হামিদ, ডাঃ মিজান, নুর হোসেন, ইমাম হোসেন, মিয়া হোসেন, মুজাহেদ কুতুবী, এমদাদ হোসেন, জামাল উদ্দিন, বেলাল উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রহমান, সেলিম, হাসান শরিফ সহ প্রায় ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা যুবক। ক্যাম্প পুলিশ এদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণ করছে বলে তারা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে উখিয়া টেকনাফের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল মালেক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উখিয়া নিউজ ডটকমকে জানান, পুলিশের লোকবল সংকটের কারনে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় তারা কোন না কোন অপরাধের সাথে সরাসরি জড়িত। তবুও সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে রোহিঙ্গারা যাতে কোন অপরাধমুলক তৎপরতা চালাতে না পারে।
পাঠকের মতামত