স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু দিনে দিনে তারা আমাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য দুশ্চিন্তার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিলাম। কিন্তু তারা এখনও কাউকে ফিরিয়ে নেয়নি। এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।
শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘রাখাইনে নিরাপত্তা ও স্থিতিশালতা: ভারত প্রশান্ত মহানগর ঘিরে থাকা দেশগুলোর ওপর প্রভাব’ শিরোনামে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সম্প্রতি রাখাইনে যে অভিযান চালায়, তাতে বারবার তারা আমাদের সীমানার ভেতরে মর্টারশেল ফেলেছে। তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীও ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিষয়টি আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ তাদের এই নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়টি শক্তভাবে দেখার জন্য আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে অনুরোধ করেছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উদ্যোগে গড়া সংগঠন ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স’ (বিসিআইপিএ) এই আলোচনার আয়োজন করে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ এমডি হাশিম, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, কানাডার হাই কমিশনার লিলি নিকোলস, আমেরিকার দূতাবাসের প্রতিনিধি হাইকস প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, ঢাবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন বিসিআইপিএ’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান। অনুষ্ঠানে বক্তারা রোহিঙ্গা সংকটের বাস্তবসম্মত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু এটাকে সামনে এনে আমাদের মূল যে দাবি, অর্থাৎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ভুলে গেলে হবে না। সেটার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পাশে থাকবে বলে বিশ্বাস করি। ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলো, বিশেষ করে চীনের শক্ত অবস্থান কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিসিআইপিএ’র মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করে সমাধানের জন্য কিছু করণীয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংসতার ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিষয়টি বারবার তুলে ধরতে হবে। এই ইস্যুকে সবসময় প্রাণবন্ত রাখতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে মিয়ানমারের অপপ্রচারের। তাদের এ সংক্রান্ত প্রতিটি পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। আইসিজে, ওআইসিসহ বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিতে হবে। রোহিঙ্গা নেতৃত্ব গড়ে তুলতে সহায়তা দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারবৃন্দ রোহিঙ্গা সমস্যাকে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এসময় তারা এই ইস্যুতে তাদের দেশ বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট মোকবিলায় এক হয়ে কাজ করতে হবে। নইলে এটি একটি বৈশ্বিক সংকটে রূপ নেবে