প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়েছে। শরণার্থী ক্যাম্পে নতুন শিশুর জন্মের ফলে তাদের সংখ্যা বাড়ছেই।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো- রোহিঙ্গাদের অনেকেই মাদক ও অস্ত্রপাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা (রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণ দল) একে-অন্যের সঙ্গে মারামারি ও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে।’
বুধবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাকেই শুনসুকে। এসময় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাপান মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলতে পারে।’
জবাবে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপান বাংলাদেশকে সমর্থন করে। তবে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য গণতন্ত্রের (মিয়ানমারে) জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন সম্ভব।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এসব কথা জানান।
তিনি জানান, বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার সম্পর্ককে বিস্ময়কর উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান হারে বিকশিত হচ্ছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাপানের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জাপানের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জাপান এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে, যার মধ্যে রয়েছে মাতারবাড়ি এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো বড় প্রকল্প।’
প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে ‘বাংলাদেশের মহান বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এসময় জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে গর্ববোধ করে। জাপান বাংলাদেশকে উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে আমি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলাম। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নে বিস্মিত হয়েছি।
তাকেই শুনসুকে বলেন, জাপান সরকার জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২০১৪ সালে চালু করা জাপান ও বাংলাদেশের ব্যাপক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ঢাকা থেকে টোকিওর মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার ফলে আগামী দিনে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
এ সময় অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি উপস্থিত ছিলেন।