উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭/০৯/২০২৪ ১০:২৮ এএম

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিদ্রোহকে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখেছে।

তবে রাখাইনে সেনাদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করায় এখন জান্তা এবং কিছু রোহিঙ্গা যোদ্ধা অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

রয়টার্স জানায়, এক সময় অসম্ভব মনে হলেও এখন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এক ধরনের ‘সমঝোতা’ হয়েছে, যাতে তারা একে অপরের ওপর হামলা না করে।

কারণ তারা উভয়েই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুটি প্রধান স্বাধীনতাকামী সংগঠনের একটি আরএসও এবং অন্যটি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)।

এ দুটি সংগঠনের কর্মীরাও মাঝে মাঝে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

আরএসওর রাজনৈতিক বিষয়ক প্রধান কো কো লিন বলেন, ‘জান্তা আমাদের আক্রমণ করেনি, আর আমরাও তাদের আক্রমণ করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন তারা আমাদের আক্রমণ করছে না, তখন কেন আমরা একই সময়ে দুটি লক্ষ্যের দিকে আঘাত করব? এটি স্বাভাবিকভাবেই একটি সমঝোতায় পরিণত হয়েছে।’

কো কো লিন উল্লেখ করেন, এই সমঝোতা আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি নয় এবং জান্তার সঙ্গে তাদের কোনো যৌথ অভিযানও চলছে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধারা নিজেদের ইউনিফর্ম এবং নিজস্ব অস্ত্র ব্যবহার করছে।’

এ বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মন্তব্য জানতে রয়টার্স যোগাযোগ করেও সাড়া পায়নি।

কো কো লিন জানান, এ বছরের শুরুর দিকে আরএসও যোদ্ধারা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহরে প্রবেশ করে, যেখানে জান্তা এবং আরএসও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

তবে তিনি সমঝোতার মেয়াদ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু জানাননি। আরএসওর বক্তব্য নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।

কো কো লিন আরও অভিযোগ করেন, তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে জোট গঠনের প্রস্তাব দিলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করে।

তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে টার্গেট করেছে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে।

তিনি বলেন, আমরা তাদের বারবার রোহিঙ্গাদের আক্রমণ না করতে অনুরোধ করেছি; কিন্তু তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি।

আরাকান আর্মিকে সমর্থনকারী রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা রয়েছে।

কিছু রোহিঙ্গাকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত আরএসও রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে।

তবে সংগঠনটি ২০২২ সাল থেকে পুনর্গঠিত হয়েছে এবং এখন এর যোদ্ধার সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যে।

যদিও এদের সবাই সশস্ত্র নয় বলে জানিয়েছেন কো কো লিন।

রাখাইনে সংঘাতের মধ্যে এ বছরের শুরুতে রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য আরএসও প্রায় এক হাজার যোদ্ধা নিয়ে মংডুতে প্রবেশ করে।

ওই সময় আরাকান আর্মি সেখান থেকে সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।

তবে আগস্টের শুরুতে মংডুতে প্রাণঘাতী হামলার পর তারা এলাকা থেকে সরে যায়। ওই হামলায় প্রায় ১৮০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানায়।

কো কো লিন জানান, তারা আরও বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি এড়াতে কৌশলগত কারণে ওই এলাকা থেকে সরে এসেছেন।

তবে ভবিষ্যতে আবারও গভীরে গিয়ে লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা রয়েছে।সূত্র : কক্স বাংলা

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির বুলেটপ্রুফ গাড়িতে টহল

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টে মরিয়া হয়ে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আর চোরাচালান বন্ধে ...