কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড নাশকতামূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। অগ্নিকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান গতকাল রবিবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
এর আগে আবু সুফিয়ান জেলা প্রশাসকের কাছে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। আগুনের ঘটনায় মামলা করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
আবু সুফিয়ান জানান, উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ মার্চ ঘটা আগ্নিকাণ্ড ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ এই অগ্নিসংযোগ করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আগের দিন ওই ক্যাম্পে গোলাগুলি হয়েছে। মামলা করা হলে ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে কারা কিংবা কোন গ্রুপ এই অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতা করেছে। তখন জানা যাবে কারা এর জন্য দায়ী। ঘটনার কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি ১০টি সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে নানা প্রমাণপত্র হিসেবে ৭৪টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে। তিন দিন ধরে তদন্তকালে তদন্ত কমিটি অন্তত ৭৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। তদন্তকালে রোহিঙ্গারা বলেছে, এটি পরিকল্পিত নাশকতা। রোহিঙ্গারা যে সাক্ষ্য দিয়েছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এবং ভিন্ন ভিন্ন নাম পাওয়া গেছে। এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলা করার মাধ্যমে এ ঘটনার অধিকতর তদন্ত জরুরি।
তদন্ত কমিটির প্রধান আবু সুফিয়ান বলেন, গত ৫ মার্চ দুপুর আড়াইটার পর ১১ নম্বর ক্যাম্পের ডি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে চার থেকে পাঁচটি স্থানে আগুন লাগে। এটা নাশকতার প্রমাণ। অগ্নিকাণ্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রোহিঙ্গারা আগুন নেভাতে গেলে অনেকেই নিষেধ করেছে, তবে তা রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, আগুন নেভানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরি।
তদন্ত কমিটি জানায়, ওই দিনের আগুনে দুই হাজার ২০০ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। আর আহত হয় প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা।
প্রতিবেদনে করা সুপারিশের মধ্যে আছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করার মতো প্রশস্ত রাস্তা করা যেতে পারে, রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে আগুনসহিষ্ণু কিছু ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র বাজার বসাতে না দেওয়া এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্য স্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত থাকা, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশমুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি করা, ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়্যারলেস টাওয়ার স্থাপন, ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং এক ক্যাম্প থেকে অপরাধ করে অন্য ক্যাম্পে পালানো রোধে প্রত্যেক ক্যাম্পে নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন করা।