কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। হচ্ছে রক্তপাত, বাড়ছে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতাও। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও মাদক রোধে জোরদার করা হচ্ছে যৌথ অভিযান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহলের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি।
কক্সবাজারের উখিয়ার জামতলি ক্যাম্প; রয়েছে উচু-নিচু পাহাড়। এসব পাহাড়েই অবস্থান নেয় আরসা-আরএসওসহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। তাই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অতৎপরতা ঠেকাতে এবার তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।
ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে এপিবিএন। এখন তাদের সঙ্গে যৌথ অভিযানে যুক্ত হয়েছে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ক্যাম্পের উচু-নিচু পাহাড়ে টহলের পাশাপাশি ঘিরে ফেলা হয় পুরো ব্লক; তারপর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে চালানো হয় তল্লাশি।
কীভাবে যৌথ অভিযান পরিচালিত হয় তার বর্ণনা দেন অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ৮ এপিবিএনের সহঅধিনায়ক খন্দকার ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, অভিযানে প্রথমে ক্যাম্প নির্ধারণ করা হয়। এরপর ওই ক্যাম্পের ব্লকগুলো যেখানে অস্ত্রধারি বা দুষ্কৃতিকারীরা থাকতে পারে সেসব ব্লকগুলো চারদিকে ঘিরে ফেলা হয়। তারপর ব্লকে ব্লকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ১০০ এপিবিএন সদস্য, ২ প্লাটুন বিজিবি, ২৫ জন র্যাব সদস্য, ২৫ জন পুলিশ সদস্য ও ২৫ জন আনসার সদস্য থাকে।
ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত টহল দিচ্ছে এপিবিএন। আর সপ্তাহে একবার কিংবা দু’বার পরিচালিত হচ্ছে যৌথ টহল ও যৌথ অভিযান। এতে তাদের সহায়তা করছে ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতারা। সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবি, স্বদেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পে নিরাপদে থাকতে চান তারা।
জামতলী ক্যাম্প ডি ২’র বাসিন্দা হাকিম বলেন, ক্যাম্পে যে খুনোখুনি, গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলে- এগুলো আমরা চাই না। ক্যাম্পে এসব অস্থিরতা বন্ধ হোক। যতদিন নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে না যাচ্ছি, ততদিন যেন ক্যাম্পে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। এই নিরাপত্তা আমরা দাবি করছি।
আরেক রোহিঙ্গা আবদুর রহমান বলেন, ক্যাম্পকে নিরাপদ করতে প্রশাসন সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক, এটা আমাদের দাবি। এখন প্রশাসনের টহল ও অভিযান বেড়েছে, এতে অনেক অপরাধী পালিয়েছে। আমরা চাই, ক্যাম্পে একটু শান্তিতে বসবাস করতে।
আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানালেন, ক্যাম্পে অস্থিরতা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও মাদক ঠেকাতে যৌথ অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
টেকনাফের র্যাব-১৫ সিপিসি-১ এর স্কোয়াড্রন কমান্ডার এএসপি মাহতাব বলেন, যৌথ অভিযানের মূল উদ্দেশ্যে হল মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকানো। যেসব তথ্য পাচ্ছি সেসব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সব বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং যাব। বিশেষ করে, আরসাসহ অন্যন্যা সন্ত্রাসীগুলো থেকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মুক্তি ও স্বস্তি দিতে কাজ করে যাচ্ছি।
উখিয়ার ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হবার কারণে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অস্থিরতা রোধ এবং অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য যৌথ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যৌথ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীরা আইনের আওতায় আসলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে স্বস্তি ফিরবে।
আমির জাফর বলেন, প্রতিদিনই এপিবিএন সদস্যরা নিজেদের মতো করে অভিযান পরিচালনা করছে। আর কিছুদিন পরপর বা সপ্তাহে দুদিন করে এপিবিএন, জেলা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি।
এপিবিএন জানায়, গেলো একমাসে হত্যা, অপহরণ, মাদক, অস্ত্র ও অন্যান্য ১৫টি মামলায় ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর উদ্ধার করা হয় ৪টি অস্ত্র, ৪ রাউন্ড গুলি ও প্রায় ২৪ হাজার ইয়াবা। সুত্র: সময়টিভি
পাঠকের মতামত