উখিয়া নিউজ ডটকম::
নির্মূল হওয়ার প্রায় তিন যুগের মাথায় ডিপথেরিয়া ফিরে এসেছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই রোগ ধরা পড়েছে সমপ্রতি। বাংলাদেশ থেকে ৩৫ বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছিল এই রোগ। গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ানো রোগ ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত ২ দুই হাজার ৭৫৬ জন রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ‘করনিব্যাক্টেরিয়াম ডিপথেরি’ নামক ব্যাকটেরিয়ায় ঘটিত সংক্রামক এই রোগে এ পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য অফিস। আর এই সংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের রক্ষা করতে টিকা দিচ্ছে সরকার। ক্যাম্পে কাজ করে এমন বাংলাদেশি ছয়জনের এই রোগ শনাক্ত হয়েছে বলে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম জানিয়েছেন। শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যাদের বয়স সাত বছরের নিচে। অন্যদিকে বিলুপ্ত এই রোগটির সঙ্গে অপরিচিত দেশের নতুন চিকিৎসকরা। তাই এই সংক্রামক ব্যাধি থেকে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের রক্ষা করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫শে অগাস্ট থেকে ছয় লাখের উপরে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে দমন-পীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা দশকের পর দশক মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫৬ জন ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই রোগে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, সাত বছরের নিচে যাদের বয়স সেসব শিশু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সিভিল সার্জন আরো বলেন, রোগটি এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগে। এই রোগের রোগী মিয়ানমার থেকে এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হচ্ছে। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসার ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো হলো জ্বর, গলাফুলে যায়, গলা ব্যথা, কাশি হওয়া। দেখা যায় ইনফেকশন হওয়ার দুই থেকে পাঁচ দিন পর ধরা পড়ে। ছোটদের ক্ষেত্রে জ্বরের তাপমাত্রায় একটু বেশি হয়। ১৫ বছরের নিচে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সন্দেহভাজন আক্রান্তদের এক জায়গায় রাখা হচ্ছে। ক্যাম্পের মধ্যে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতাল ও এনজিওরা এক্ষেত্রে কাজ করছে। জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মাঝে ডিপথেরিয়া রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করছে। পর্যায়ক্রমে সব শিশুকে টিকা দেয়া হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয় শিশুদের মাঝেও এই টিকা দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, রোগ নির্ণয় করা ও দ্রুত টিকা দেয়া। যাতে নতুন করে না ছড়ায়। তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিষেধকের কাজ করতে পারে। তিনি জানান, ডিপথেরিয়া একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। একজন থেকে অন্যজনে দ্রুত ছড়ায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ভ্যাকসিন দেয়া আছে। প্রতিবছর দেয়া হয়। তাদের সংক্রমন সম্ভাবনা নেই। সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ক্যাম্পের সবাইকে টিকা দিতে হবে। আর আশপাশে যারা আছেন তাদেরকেও প্রতিষেধকমূলক টিকা দিতে হবে।
আইইডিসিআর-এর বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারের পক্ষ থেকে দু’ ধরনের ভ্যাকসিনেশন দেয়া হচ্ছে। যাদের বয়স ছয় বছরের উপরে তাদের জন্য এক ধরনের ভ্যাকসিনেশন এবং ছয় বছরের নিচে তাদের জন্য আরেক ধরনের ভ্যাকসিনেশন দেয়া হচ্ছে। রোগটি যেহেতু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায় সেহেতু এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে ধরনের সংক্রামক রোগ। সন্দেহজনক ওই এলাকার দু’জন বাংলাদেশির নমুনা আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তাতে রোগটি ধরা পড়েনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।