রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর'সা সন্ত্রাসীরা হেড মাঝি বা রোহিঙ্গা নেতাদের টার্গেট করেই আধিপত্য বিস্তারের মিশনে নেমেছে।
উখিয়াতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক খুন,হত্যাকান্ড বেড়েই চলছে। তাদের মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও উগ্রতাকেই প্রধান্য দিতে অনেক রোহিঙ্গা হেড মাঝিকে জীবন দিতে হয়েছে।
★ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাড়ছে খুন
★ ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ চাই আর'সা সন্ত্রাসীরা
মিয়ানমার সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই চালিয়ে যাওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
দুটি গ্রুপের সশস্ত্র যোদ্ধারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে এবং নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে খুন-দখল-চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জুলুম-নিপীড়ন যেন সাধারণ রোহিঙ্গাদের জন্য নিত্যসঙ্গী হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। দুটি গ্রুপের ধারাবাহিক খুনোখুনি, জুলুম-নিপীড়ন আর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা।
প্রতিবছরই ক্ষমতাকে পুজি করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে বারে বার প্রাণ হানি হচ্ছে রোহিঙ্গা নেতা বা হেড মাঝিদের।
২০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এম ৩২ ব্লকের বাসিন্দা আবু ছৈয়দের ছেলে একই ক্যাম্পের (হেড মাঝি) মোহাম্মদ নুর (৩০) কে কুপিয়ে হত্যা করেছে । ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রথম গতকাল ৪ মার্চ ২০ নম্বর ক্যাম্পেই ঘটেছে। গত কয়েকমাসে এমন হত্যাকান্ডের ঘটনা কিন্তু ঘটেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানাজায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০ এক্সটেনশনে মোজাম্মেলের মুদি দোকান থেকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে অজ্ঞাত ৪/ ৫ জন সন্ত্রাসী রাতের অন্ধকারে এলোপাতাড়িভাবে মুখে ও গলায় কুপিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়৷ পরে স্থানীরা তাঁকে মৃত উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেন৷ ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।
২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গা নেতা ও মাঝি হত্যার তথ্য।
১২ জানুয়ারি ২০২৪ সালে বালুখালী ২০নং ক্যাম্পের হেড মাঝি করিম উল্লাহ কে জবাই করে হত্যা করেছিল আরসা’র সন্ত্রাসীরা।
১৩ই মে ২০২৪ সালেও, ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ ইলিয়াস(৪৩) কে গুলি করে হত্যা করা হয়।
৯ জানুয়ারি ২০২৩ সালে, ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পরিচালনা কমিটির উপ কমিউনিটির নেতা বি ব্লকের মোহাম্মদ সলিম মাঝিকেও হত্যা হয় একি কায়দায়।
আরসার সাথে লিয়াজু না থাকায় ৮ জানুয়ারি ২০২৩ সালে ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ ব্লকের প্রধান কমিউনিটি নেতা (হেড মাঝি) মোহাম্মদ রশিদ (৩৬)কে ও পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়ছিল।
ক্ষমতার প্রভাবে ৭ জানুয়ারি ২০২৩ সালে জামতলী ১৫ নং ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ রফিক (৩৫) কে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়ছিল।
ব্লকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১০ই আগস্ট ২০২৩ সালে জামতলী ১৫ নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আবু তালেব কে কুপিয়ে হত্যা করেছিল আর'সা সন্ত্রাসীরা।
আধিপত্য বিস্তারে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৬ জুলাই ২০২৩ সালে কুতুপালং ১ নং ক্যাম্পের এ/৯ ব্লকে আরসা গ্রুপের ছুরিকাঘাতে হেড মাঝি এবাদুল্লাহ নিহত হয়।
২৫ নভেম্বর ২০২৩ সালেও একি কায়দায় অধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৯নং ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আতাউল্লাহ (৫০) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়ছিল।
ক্ষমতা হাতে নিতে ১৩ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২২ সালে কুতুপালং ২নং ক্যাম্পেও আবুল কালাম নামে এক রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করে আর'সা গ্রুপ।
দুই গ্রুপের সংঘর্ষের একদিন পর ১৫ অক্টোবর ২০২২ সালে ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প তানজিমারখোলা এলাকায় মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মো. আনোয়ার এবং সাবমাঝি মো. ইউনুস (৩৮) কে কুপিয়ে হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা।
এসব ১৩ নম্বর থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ-২ ব্লকের নুর মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ার (৩৫) এবং ক্যাম্পের একই ব্লকের সৈয়দ কাশিমের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুস ওরফে মৌলভী ইউনুস (৩২) কে ও হত্যা কান্ড চালিয়েছিল তারা।
এভাবেই ক্ষমতাকে হাতে রাখতে আর'সা সন্ত্রাসীরা একেরপর এক হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কোন রোহিঙ্গা নেতার সাথে তাদের মনোমালিন্য হলেও তারা রাতের আধারে এসে তুলে নিয়ে যায় এমন ঘটনাও ঘটেছে ক্যাম্পে।
১৪ এপিবিএন পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে এমন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেনি। ২০২৫ সালে এই প্রথম হেড মাঝি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। তাদের দমন করা কঠিন থেকে কঠিন হচ্ছে পরিস্থিতি। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরদার রাখা হয়েছে ক্যাম্পে।