রোহিঙ্গা গণহত্যার সাক্ষ্য প্রমাণ মুছে ফেলতে তোড়জোড় শুরু করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিজেদের সাফাই গাইতে এবার প্রশ্নবিদ্ধ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার। অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে নিপীড়নের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ না করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। চলতি এপ্রিলে জাতিসংঘের আদালতে এসব সাক্ষ্য-প্রমাণই হাজির করতে যাচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি ইয়াংগুনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ফ্রন্টটিয়ার মিয়ানমারের প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য।
রাখাইনের চুট পাইন গ্রাম- ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর থার্টি-থার্ড লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের সদস্যরা জ্বালিয়ে দেয় গ্রামটি। স্থানীয়দের তোলা ভিডিওতে দেখা যায়, দুই শিশুর মৃতদেহ আর গুলিবিদ্ধ ১৬ বছর বয়সী জামিলা খাতুনকে।
পরে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার সন্ধান মেলে। জানান, সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতনের গল্প।
জামিলা খাতুন জানান, পালাতে গেলে সেনাবাহিনী পেছন থেকে গুলি করে, ধানক্ষেতে পরে যাই, প্রচন্ড যন্ত্রণায় উঠতে পারিনি, তখন ৪ জন সেনা আমাকে ধর্ষণ করে।
প্রায় কয়েকমাস ধরে চলা সেনা তাণ্ডবে ওই গ্রামের সাড়ে ৩শ’রও বেশি মানুষ নিহত হয়। নির্যাতনের শিকার কয়েকশ’।
২০২০ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার ৬০৮ পাতার তথ্য-প্রমাণের মধ্যে রয়েছে চুট পাইন গ্রামটিও। চলতি মাসের ২৪ তারিখে এ মামলার শুনানিকে সামনে রেখে বেশ কয়েকমাস ধরে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহে তৎপর জান্তাবাহিনী।
এ নিয়ে মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যম ফ্রন্টটিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল ফেব্রুয়ারিতে ওই গ্রাম থেকে পালিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা গ্রুপের সাক্ষ্য নেয় সেনাবাহিনী। সেসময় প্রকৃত তথ্য বললে নির্যাতন ও গ্রেফতারের ভয় দেখায় তারা।
শুধু চুট পাইন নয়, মংদু, বুদিডংসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা গ্রাম থেকে একইভাবে ভয় দেখিয়ে সাক্ষ্য নিয়েছে তারা। সেনাবাহিনী নয়, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে- এমনটা বলতে বাধ্য করছে।
এ ব্যাপারে ব্রিটিশ আইনজীবী উইলিয়াম শাবাচ বলেন, এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুঁজে পাওয়া কঠিন, পরিস্থিতিগত প্রমাণ ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত। তাই মামলায় এই তথ্য প্রমাণ করা সহজ হবে না বলে জানান।
গাম্বিয়ার আইনজীবী পল রিচলারও বলেন, জান্তা সরকার জোরপূর্বক নেয়া এসব সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করলে আরও গুরুতর অপরাধের মুখে পড়বে।
গেল বছর রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা বাতিল চেয়ে মিয়ানমারের আবেদন খারিজ হয়। এ পর্বে দু’পক্ষই সাক্ষ্য-প্রমাণ উত্থাপনের সুযোগ পাবে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যভাগে রায় হতে পারে।