উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট ক্যাম্প থাকলেও তারা সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে কেউ কেউ। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে সরকারের পদক্ষেপ চেয়েছে।
নিজ দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার স্বীকার হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে রোহিঙ্গারা। তবে এখানে আশ্রয় নিতে এসে অস্ত্র ও মাদক কেনাবেচাসহ সমাজবিরোধী নানা তৎপরতায় জড়িত হয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের এসব তৎপরতা ও ক্যাম্প ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমত উদ্বিগ্ন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন।
সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতার কারণে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে পুলিশের মধ্যে। তারা বলছে, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার হওয়ায় এমনিতেই এক ধরনের উগ্রবাদী ভাবধারা রয়েছে এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে। এ কারণে জঙ্গিবাদীরা তাদেরকে সহজেই উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জেলা বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা মাদক, মানবপাচার নানা উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। তারা পাহাড় কাটা, বন উজাড়, সমুদ্রে মৎস্য পোনা ধ্বংস, চুরি, ডাকাতি, সস্তায় শ্রম বিক্রিসহ নিরাপত্তা হুমকিজনিত কর্মকাণ্ডেও জড়িত। কিন্তু চেহারায় কিছুটা মিল থাকায় রোহিঙ্গারা সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারছে।’
রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ বেশ কিছু বিষয়ে ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন জেলা প্রশাসক আলী হোসেন। আজ শুরু হতে যাওয়া ডিসি সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী বা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। তারা বিভিন্ন আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোট তিনটি সুপারিশ করেছেন। এগুলো হলো ১. অনুপ্রবেশরোধে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ; ২. সীমান্তে বিজিবির নতুন বিওপি স্থাপন এবং দুইটি বিওপির মধ্যবর্তী স্থানে পোস্ট ক্যাম্প করা; ৩. বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জনবল বৃদ্ধি। এর মাধ্যমে সীমান্তে নজরদারি ও তদারকি বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসক। নাফ নদীর জলসীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে টেকনাফ শাহ পরীর দ্বীপ পযন্ত জলসীমা রক্ষার দায়িত্ব কোস্টগার্ডকে দেয়ার পক্ষে আলী হোসেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে ৩২ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন৷ এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব বলছে৷
মিয়ানমারে জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা দুই দশক আগে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে৷ এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার৷ তবে এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মিয়ানমার সরকারের। তারা রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবেও মানতে নারাজ৷
জেলা প্রশাসক আলী হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে প্রায় নতুন নতুন রোহিঙ্গা আসছে বাংলাদেশে। অবৈধভাবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারকে বারবার প্রস্তাব দিচ্ছে তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দিচ্ছে না। এ কারণ ডিসি সম্মেলন প্রস্তাবটা দিয়েছি যেন প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে।’