রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা তহবিল কমছে। ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা চেয়ে পাওয়া গেছে এর ৫০ শতাংশ।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এমন এক প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রোহিঙ্গাদের জন্য যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) ঘোষণা করা হচ্ছে। তহবিল–সংকট থাকায় চাওয়া হচ্ছে আরও কম অর্থ। পরিমাণে তা ৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার।
রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক মনোযোগের আড়ালে চলে গেছে। তহবিল–সংকট থাকায় চাওয়া হচ্ছে আরও কম অর্থ।
মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে আসছে জাতিসংঘ। ২০১৭ সালে থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্য জেআরপি নামের মানবিক সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।
জেনেভায় জেআরপি-২০২৪ ঘোষণা নিয়ে আজ সহযোগিতাকারী দেশগুলো ও জাতিসংঘের সমন্বিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল।
জেআরপি-২০২৪–এর খসড়া পরিকল্পনা থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার চাহিদা রয়েছে মোট সাড়ে ১৫ লাখ মানুষের, এর মধ্যে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন রয়েছেন। তবে তহবিল–সংকটের কারণে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। এ বছর রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি ৩ লাখ ৪৬ হাজার বাংলাদেশিকে মানবিক সহায়তার পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। চাহিদা থাকার পরও সংকটে থাকা দুই লাখ বাংলাদেশি জেআরপি থেকে বাদ পড়ছেন। কারণ, তহবিলের অপর্যাপ্ততা।
চলতি বছরের জেআরপিতে অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা, সম্মানজনক আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন এবং স্যানিটেশন (ওয়াশ) সেবা। খসড়া জেআরপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তায়।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই মানবিক সংকট চলছে। সেখানেও সহযোগিতা করতে হয় দাতাদেশগুলোকে। ফলে তহবিলের ঘাটতি রয়েছে। এবার দ্রুত জেআরপি প্রকাশ করার মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব তহবিল সংগ্রহ করাই লক্ষ্য।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সহায়তা সবচেয়ে কম এসেছিল, যা ছিল জেআরপির চাহিদার মাত্র ৫০ শতাংশ বা ৪৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পরিকল্পনার বাইরে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার অর্থসহায়তা পেয়েছে রোহিঙ্গারা। এর আগে সবচেয়ে কম হারে সহায়তা এসেছিল ২০২০ সালে, চাহিদার ৫৯ শতাংশ। দেখা যায়, ২০২২ সালে সহায়তা এসেছিল চাহিদার প্রায় ৬৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি হারে সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল ২০১৯ সালে, চাহিদার ৭৫ শতাংশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক মনোযোগের আড়ালে চলে গেছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটও আছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ততটা আগ্রহী নয়। কর্মকর্তারা মনে করেন, সহায়তা তহবিল কমে আসায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার, যা সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
জাতিসংঘ চাইছে প্রকল্পগুলো সাশ্রয়ীভাবে পরিচালনা করতে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে নিজ জীবিকা নিজেরাই জোগাড় করতে পারে, সে ধরনের দক্ষতা বাড়াতে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা মনে করছেন, খাদ্যসহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গারা আরও মরিয়া হয়ে উঠবে, যা শিবিরগুলোতে সহিংসতা ও অস্থিরতা বাড়াবে। মানব পাচারের শিকার হওয়ার উচ্চতর ঝুঁকিতে রয়েছে রোহিঙ্গারা, বিশেষ করে শিশু ও মেয়েরা। ফলে বিগত বছরের মতো সামনের দিনগুলোতে সমুদ্রে আরও রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা পাওয়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। মিয়ানমারে যুদ্ধ চলার মধ্যে তাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে তেমন কাজ হচ্ছে না। মিয়ানমার থেকে আসা ও এ দেশে জন্মগ্রহণ মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। সুত্র: প্রথমআলো