[caption id="attachment_122427" align="alignnone" width="1200"] ফাইল ছবি[/caption]২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করছে। পাইলট ভিত্তিতে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যাবাসন কীভাবে হবে বা এর প্রক্রিয়াটি কী এবং কখন হবে এটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের মন্তব্য হচ্ছে, এটি একটি জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। মিয়ানমারের সদিচ্ছা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। তবে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে সব বিষয়ে একমত না হলেও এটিকে মানদণ্ড হিসেবে মনে করছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যাবাসনের একটি প্রক্রিয়া আছে। আমরা এটি অনুসরণ করছি। প্রথমত, রোহিঙ্গা যাচাই-বাছাই। দ্বিতীয়ত, তাদের ফেরত যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেওয়া। তৃতীয়ত, স্বতঃপ্রণোদিত উপায়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো।
উল্লেখ্য, অক্লান্ত প্রচেষ্টার পরও একজন রোহিঙ্গাকে গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের অনীহার কারণে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বিপক্ষীয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিপক্ষীয়, আন্তর্জাতিক উদ্যোগ চলমান। এরমধ্যে ত্রিপক্ষীয় মেকানিজমের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পাইলট উদ্যোগে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে বাংলাদেশ প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছে।
পাইলট ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন
২০২০ সালে পাইলট ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হলে সম্মত হয় মিয়ানমার। ওই সময় বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছিল গ্রামভিত্তিক অর্থাৎ একটি বা দুটি গ্রামের রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে একসঙ্গে ফেরত পাঠানোর। কিন্তু মিয়ানমার ঠিক এর উল্টোটি করে বিভিন্ন গ্রামের ৮০০-এর বেশি রোহিঙ্গাদের তালিকা দেয়। এরমধ্যে বেশিরভাগ ছিল খণ্ডিত পরিবার। মিয়ানমার তখন প্রস্তাব করেছিল ওই রোহিঙ্গাদের ভিন্ন একটি জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই তালিকা নিয়ে বেশি অগ্রসর হওয়া যায়নি। কারণ, বাংলাদেশের গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসনের প্রস্তাবে তেমন সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।
এরপর কোভিড এবং মিয়ানমারে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে আলোচনায় শ্লথগতি চলে আসে।
নতুন তালিকা
২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে মিয়ানমার ৭১১ জনের একটি তালিকা দেয়। এখানেও খণ্ডিত পরিবার অর্থাৎ বাবা-মায়ের নাম থাকলে বাচ্চাদের নাম নেই, ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাসহ অন্যান্য সমস্যা রয়ে যায়। এর বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই তালিকায় যে খণ্ডিত পরিবারের নাম দেওয়া হয়েছিল, সেটিকে পূর্ণ করার জন্য ৪৪৮ জনের নাম পাঠানো হয়। এরমধ্যে নবজাতক শিশুদের নামও ছিল।
এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের নতুন তালিকা পাঠানোর পরে মিয়ানমার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়তি তথ্য এবং নবজাতক শিশুদের জন্য কোর্টের সার্টিফিকেট চেয়েছে।
প্রত্যাবাসনের পরবর্তী ধাপ
রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করার ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করার জন্য মিয়ানমার থেকে একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশে আসতে হবে, যাতে এটির সমাধান করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে ব্যক্তির নাম ও গ্রামের নাম তাদের রেকর্ডের সঙ্গে মিল নেই। এ সমস্যার সমাধানে তাদের এখানে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই জটিলতার পরে তাদের ফেরত যাওয়ার জন্য মিয়ানমার থেকে আরেকটি প্রতিনিধি দল আসার প্রয়োজন। যারা প্রত্যাবাসনের পরে রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকা কী হবে এবং অন্যান্য বিষয় তুলে ধরবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করার জন্য এটি প্রয়োজন।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি স্বতঃপ্রণোদিত এবং রোহিঙ্গাদের এজন্য একটি ফরম পূরণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময়ে জাতিসংঘ এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে। সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন