সুজাউদ্দিন রুবেল::
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একরকম ধামাচাপা পড়ে গেছে বহুল কাঙ্ক্ষিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার বার বার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় দেশে ফিরে যেতে আবারও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন খোদ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।
কক্সবাজারের উখিয়ার ১৯ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা করিম উল্লাহ ও মমতাজুল হক। সাত বছর ধরে স্বদেশে ফেরার ইচ্ছায় কঠিন জীবন পার করছেন ত্রিপলের নিচে। কিন্তু এখনও ফেরার সুযোগ হয়নি। দুজনের দাবি, ৭ বছর ধরে ত্রাণ পেলেও কবে তারা নিজ দেশে ফিরতে পারবেন তা কেউ বলতে পারছেন না।
করিম উল্লাহ (৬০) বলেন, ‘ত্রাণ সহায়তা ঠিকমতো পাচ্ছি কিনা, সেটা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কিছুই বলে না ত্রাণদাতা সংস্থার কর্তারা।’
মমতাজুল হক (২২) বলেন, ‘ক্যাম্পে ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফ, ইউএন আছে; তারা ঠিকমতো খাদ্য দিচ্ছে। কিন্তু দেয়ার সময় স্বদেশে ফিরে যাওয়ার কথা কেউ বলে না।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শুধু করিম বা মমতাজুল হক নন, ‘কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে বসবাসরত অনেক রোহিঙ্গার দাবি, তাদের নিয়ে বাণিজ্য চলছে। কিন্তু নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে কেউ কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না ‘
ক্যাম্প-১৯-এর বাসিন্দা কাশেম বলেন, ‘খাদ্য দিয়ে ক্যাম্পে আমাদের ভিখারি বানিয়ে রেখেছে। আমরা আমাদের দেশে চলে যেতে চাই; কিন্তু নিয়ে যাচ্ছে না।’
ক্যাম্প-১৩-এর বাসিন্দা ইদ্রিস বলেন, ‘আমাদেরকে নিয়ে সবাই ব্যবসা করছে। কিন্তু মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কোনো চিহ্ন নেই। আমাদের দেশে চলে যেতে খুব বেশি ইচ্ছে করছে। এখানে ত্রিপলের মধ্যে বেশ কষ্ট পাচ্ছি।’
একই সঙ্গে দিলদার নামে আরেক জন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে এসেছি ৭ বছর হচ্ছে। এ সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে এসে আমাদের দেখে গেছে। কিন্তু তারা আমাদের দেশে ফেরত পাঠাতে কিছুই করছে না।’
আরেক রোহিঙ্গা সলিম বলেন, ‘আমাদেরকে নিয়ে ব্যবসা করছে, ফায়দা হাসিল করছে। কিন্তু সবাই আমাদের ক্ষতি করছে। আমরা জাতিসংঘকে অনুরোধ করছি, দ্রুত যাতে আমাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়।’
এদিকে, রোহিঙ্গা নেতার দাবি, আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্বদেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের জন্য টাকা-পয়সা খরচ না করে শুধুমাত্র একটি কাজ করুন -- মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে যতটুকু চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা করে দ্রুত সবার প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করুন। এটাই আমাদের অনুরোধ সবার কাছে।’
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার বারংবার কথা দিয়ে কথা রাখছে না। চুক্তির জন্য মিয়ানমারেও গিয়েছি, তালিকাও পাঠিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমার কথা দিয়ে কথা রাখছে না। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দুদেশের মধ্যে চুক্তি হলেও, এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের নানা-ছলচাতুরিতে তা সম্ভব হয়নি।’
সুত্র: সময়টিভি