সময়টিভির প্রতিবেদন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফিরে গেলো মিয়ানমার প্রতিনিধি দল
এবারও ভেস্তে গেলো প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের আলোচনা। তারা স্বদেশে ফেরাতে মন গলাতে পারেনি রোহিঙ্গাদের। কোন ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ফিরে গেছে মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
রোহিঙ্গারা বলছেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে টালবাহানা করছে মিয়ানমার। আর বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা।
মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের দিনব্যাপী আলোচনা শেষে মঙ্গলবার বিকেলে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে। সরকার সবসময় রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে, সেই বিষয়ের গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রত্যাবাসন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটা চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে চলতি বছর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল দুইবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিল। এসময় তারা (মিয়ানমার প্রতিনিধি) রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে (মিয়ানমার) যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আজকেও তারা সুনির্দিষ্ট করে বলেছে, কোন গ্রামে কে যাবে; কিভাবে যাবে। এই আলোচনাটা আমাদের সঙ্গে অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।’
তবে রোহিঙ্গারা কখন স্বদেশে ফিরে যাবেন সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন মাইনুল কবির। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা শুধু এখান (বাংলাদেশ) থেকে যাওয়াই নয়, যাওয়ার পরও যেন তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে এবং প্রত্যাবাসনটাও যেন টেকসই ও স্থায়ী হয়; সে জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রচেষ্টা চলছে।’
প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সংশয় ও অবিশ্বাস দূর করতে মিয়ানমারের সঙ্গে সবধরনের আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টায় টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদীর জালিয়াপাড়া জেটিঘাট দিয়ে পৌঁছায় মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের এ প্রতিনিধি দলটি।
এরপর বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে নদী নিবাস রেস্ট হাউজ এবং গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউজে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমার ফিরে গেছেন।
বুধবারও (১ নভেম্বর) রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি টেকনাফ আসবেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিনিধি দলটি দুদলে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গা পরিবার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মূলত প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আদায়ে এই আলোচনা চলছে।’
আলোচনার জন্য আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলোচনার মধ্যদিয়ে নিজ ভিটেমাটি ও নাগরিকত্ব দিলেই স্বদেশে ফিরবেন তারা।
আর দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন তিনি।
শরণার্থী কমিশনার বলেন, ‘জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দুই দেশের চুক্তিতে উল্লেখ্য রয়েছে। আমরা জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, দুই পক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় হবে- এই জন্য বাংলাদেশ সরকার সবসময় কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এর আগে চলতি বছর দুবার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। গত ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং গত ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। এরইমধ্যে গত ৫ মে বাংলাদেশের সাত সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।
পাঠকের মতামত