সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::

উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে বস্তিতে এক আত্বীয়ের বাড়ীতে অবস্থান নেয়া মিয়ানমারের বলিবাজার লাগোয়া জামবনিয়া গ্রামের ৪ ভাইবোন শিশু ছমুদা বেগম(১২),রাশেদা (৯) ফারুক (৭) ও ৫ বছরের আয়াছ।এক মাস পূর্বেও তাদের সংসার ছিল পরিপূর্ণ। পিতা মাতার আদর মমতায় ভরা সেই সংসারে অভাব খুব এটা ছিলনা।কিন্ত মা-বাবা হারিয়ে তারা এখন এতিম।তাদের পিতা জালাল আহামদ ও মা আনোয়ারা বেগমকে মিয়ানমারের সেনারা গলাকেটে হত্যা করেছে।জ¦ালিয়ে দিয়েছে বাড়ীঘর।গত ৩০ নবেম্বর তাদের দুলাভাইয়ের সাথে ঘুমধুম সীমান্ত পেরিয়ে এসে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে এক আশ্রয় নিয়েছে তারা ।৪ শিশু জানেনা তাদের গন্তব্য।এখন তাদের চোখেমুখে শুধুই কান্না,ভাষাহীন শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারা।

সুত্র জানায়,মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী,পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্বরতা শুরু হওয়ার পর থেকে একের পর এক স্বামী হারা স্ত্রী,সন্তান হারা পিতা,মা হারা ছেলেসহ অসংখ্য অসহায়,সহায় সম্বলহীন পরিবারের দেখা মিলছে।কিন্তু পিতা-মাতা উভয়কে হারিয়ে এতিম ৪ শিশুর নির্বাক চাহনি ও কান্না অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।গতকাল শনিবার সকালে সরজমিন কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে,একাধিক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।মিয়ানমার থেকে এক কাপড়ে বস্তিতে আসা রোহিঙ্গারা এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছে।বিশেষ করে শিশুদের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশী।শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে কষ্টের তীব্রতা বাড়ার শংকায় কুড়েঘরে দিনানিপাত করছে এসব অসহায় বস্তোহারা রোহিঙ্গারা।এক মধ্যে দেখা মেলে মা-বাবাকে হারিয়ে বোন ও দুলাভাইয়ের সাথে বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া ৪ এতিম শিশুর সাথে।জানতে চাইলে তাদের দুলাভাই জেয়ায়ের (২৫) জানান,তারা মিয়ানমারের জামবনিয়া এলাকায় বসবাস করতো,প্রথমদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে আত্রুমন না করলেও পরিবর্তিতে সেনারা ও রাখাইন যুবকরা মিলে তাদের গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে ঢুকে যুবকদের হত্যা করার পাশাপাশি যুবতীদের পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছে।আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে বসতভিটেসহ সহায় সম্পত্তি। তিনি আরো জানান,পাশেই শাশুড়বাড়ী ছিল,মিয়ানমার সেনারা শাশুড়-শাশুড়ীকে গলা কেটে হত্যা করার পর ভয়ে সবকিছু ফেলে রাতের আধারে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে এসছি পরিবারসহ।সাথে নিয়ে আসি ৪ শালাশালীকে।এখন এদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি,একদিকে অভাব তাড়না,অন্যদিকে শাশুড় শাশুড়ির রেখে যাওয়া ৪ এতিম শিশুর যন্ত্রনা। ৪ এতিম শিশুর মধ্যে কথা হয় ১৩ বছরের ছমুদার সাথে। সে জানান,রাতে তারা ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় মিয়ানমার সেনারা এসে বাবা মাকে ধরে নিয়ে যায়,পরে ক্ষেতের মধ্যে বাবা-মার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।তারপর ছোট ভাইবোনদের নিয়ে আমি দুলাভাইয়ের সাথে সীমান্ত পেরিয়ে রাতের আধাঁরে বাংলাদেশে চলে আসি।সেই থেকে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির এক আত্বীয়ের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।এখনো জানিনা কোথায় যাব কি করব ছোট ভাইবোনদেও নিয়ে।সে জানান,কেউ যদি আমাদের একটু সাহায্য করত,আশ্রয় দিত।তবে আমার ছোট ভাইবোনরা বেচে যেত।তাদের কষ্ট আর সহ্য হচ্ছেনা।শুধু ৪ এতিম নয়,কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে এমন পিতা হারা হাজারো ছোট ছোট এতিম শিশু খুব কষ্টে দিনানিপাত করছে।প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।আশ্রয় নিচ্ছে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরের পাশের রোহিঙ্গা বস্তিতে।বিজিবি অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারাদের পুশব্যাক অব্যাহত রাখলেও নির্যাতনের শিকার সহায় সম্বলহীন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছেনা।তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পয়েন্টগুলোর জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে সুযোগ বুঝে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান,যে সমস্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সে সমস্ত ফাঁকা স্থান গুলোতে বিজিবি’র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।তিনি বলেন,তথাপিও ফাঁকফোকর দিয়ে আসা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।সীমান্তে রোহিঙ্গা আনার কাজে নিয়োজিত দালালদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।