ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে ছোঁয়াচে ‘কনজাংটিভাইটিস’ নামক চক্ষু রোগের প্রার্দুভাব ছড়িয়ে পড়েছে। অল্প জায়গায় ধারণ ক্ষমতার বেশি লোক বসবাসের কারণে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে দ্রুত ছড়াচ্ছে এ রোগ। এ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।
কক্সবাজার শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ৫০ হাজার রোহিঙ্গার বসতি হাকিমপাড়ায় (ক্যাম্প-১৪) গিয়ে দেখা যায়, একটি পাহাড়ি ঢালুতে তৈরি একটি ত্রিপলের ছাউনির ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকেন মোহাম্মদ আলী।
তিনি জানান, প্রায় দুই মাস আগে প্রথমে এই রোগ হয় তাঁর স্ত্রীর। ২৫ দিন আগে তাঁর ১০ বছর বয়সী ছেলে আলী জোহারের এক চোখ থেকে পানি পড়া শুরু করে। তিন দিন পর দুই চোখে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হতে থাকে। এর পর একই সমস্যায় আক্রান্ত হয় তাঁর মেয়ে। এর পর একে একে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হন। চোখের ড্রপ ও ওষুধ খেলে কয়েকদিন ভালো থাকে, জ্বালাপোড়া কমে যায়। পরে আবার শুরু হয়। এভাবে যন্ত্রণায় কারও ঘুমও হচ্ছে না।
এই আশ্রয়শিবিরের সি, ডি ও এফ ব্লক ঘুরে অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গার প্রতিটি ঘরে ‘কনজাংটিভাইটিস’ আক্রান্ত একাধিক নারী-শিশু-কিশোরকে পাওয়া গেছে। স্থানীয় আয়েশা বেগম ও রুহুল আমিন বলেন, এমন কোনো রোহিঙ্গা পরিবার নেই, যেখানে এখন একজন হলেও আক্রান্ত হয়নি।
আশ্রয়শিবিরে ১৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের আয়তনের ছোট একটি ঘরে থাকেন আহমেদ উল্লাহর পরিবার। মধ্যখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘরটি দুই কক্ষে ভাগ করা। সেখানে গাদাগাদি করে থাকেন সাতজন। একটি কক্ষে চলে রান্নাবান্নার কাজও। অন্য পাশে টাঙানো কাপড়চোপড়। এমন পরিস্থিতিতে চক্ষু রোগে আক্রান্ত সদস্যকে আলাদা রাখার সুযোগ নেই। আহমেদ উল্লাহ বলেন, এক মাস ধরে তাঁর কিশোরী মেয়ে ও স্ত্রী চক্ষু রোগে আক্রান্ত। অন্য সদস্যরাও যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে।
রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে চক্ষু রোগ নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল। সেখানকার চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, কনজাংটিভাইটিস রোগটি পিঙ্ক আই বা মাদ্রাজ আই নামেও পরিচিত। এটি চোখের সাদা অংশের বাইরের স্তর এবং চোখের পাতার ভেতরের পৃষ্ঠের প্রদাহ। এটি হলে চোখ গোলাপি বা লালচে দেখায়। ব্যথা, জ্বালাপোড়া, চুলকানিও হতে পারে। আক্রান্ত চোখে পানি পড়তে পারে। এটি মূলত একটি ভাইরাস, যা ছোঁয়াছে।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গার চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে চক্ষু রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি শোনার পর কীভাবে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।