মনতোষ বেদজ্ঞ ::
ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিয়েছে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে। গত দুই মাসে প্রায় ৯ হাজার রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গু পরবর্তী নানা জটিলতায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জন রোহিঙ্গার। আক্রান্ত হয়েছে কিছু স্থানীয়ও। উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে সচেতনতামূলক প্রচারণা, মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস সহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ২ আগস্ট প্রচন্ড মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা ও জ্বর নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে একটি সংস্থার সার্ভিস সেন্টার ম্যানেজার জসিম উদ্দিন। কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে বসবাসরত এই এনজিও’র কর্মকর্তা সময়মতো চিকিৎসা সেবা পেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ হওয়ার পথে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বাসায় চিকিৎসা নিয়েছিলাম দুইদিন। দেখি প্লাটিলেটের পরিমান কমে যায়, আর ডায়াবেটিস উচ্চ মাত্রার ছিল। তাই ভর্তি দেওয়া হয়েছে।
শুধু জসিম নন, বিপুল রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে গত জুলাই মাসে ৬ জন রোহিঙ্গা ও চলতি আগস্টের এক সপ্তাহে ৩ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজার সদর হাাসপাতালে। এছাড়াও এ দুই মাসে ডেঙ্গু পরবর্তী নানা জটিলতায় আরও ৬ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। ওই ৬ জনের মধ্যে ৫ জন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালে এবং একজন নিজ বাড়িতে মারা গেছেন।
ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মুহম্মদ আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, গত কিছুদিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা গাইডলাইন অনুসারে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। ডেঙ্গুর কিছু ওয়ার্নিং সাইন থাকে। সেই ওয়ার্নিং সাইনগুলো যখন থাকে তখন আমরা সেই রোগিদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বলি।
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ঘনবসতিপূর্ণ এই রোহিঙ্গা বসতিতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র বেশি হওয়ায় সম্প্রতি ডেঙ্গু ভয়াবহ বিস্তার করেছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছে কিছু স্থানীয়ও। এমন পরিস্থিতিতে ‘ এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস’ ও ডেঙ্গুর বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে সচেতনতা তৈরির বিষয়ে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে কোনভাবেই জমানো পানি না থাকে – এ ব্যাপারে আমরা দ্বারে-দ্বারে গিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। এছাড়াও এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার জন্য আমরা সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি হলেও স্থানীয়দের মাঝে তা বিস্তারের আশংকা কম। প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করে দিতে পারলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।
চলতি বছর কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ১২৪ জন। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৮ হাজার ৮৮২ জন। আর স্থানীয় রয়েছেন ২৪২ জন। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার