জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের নিয়ে আসা ৪৬ গাড়ির শুল্ক ফাঁকির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিগত সরকারের সঙ্গে সংস্থাটির টানাপোড়ন শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে গাড়িগুলো তাদের অনুমতি ছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের কারণে ৭৬ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলে সংস্থাটির শুল্ক বিভাগ। এই প্রক্রিয়াকে আইনের লঙ্ঘন বলেও দাবি করে সংস্থাটি। তবে এই অভিযোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাচ্ছে ইউএনএইচসিআর। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এখন উপায় খুঁজছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন নিয়ে গাড়িগুলো নিবন্ধন করেছে ইউএনএইচসিআর। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পতিত সরকারের আমলে ৪৬টি গাড়িতে ৭৬ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে। অভিযোগ থেকে সংস্থাটিকে মুক্ত করতে এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল বিভিন্ন কাস্টমস হাউসে চিঠি পাঠায় এনবিআর। এতে বলা হয়, জাতিসংঘের এই শরণার্থী সংস্থা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৭০টি গাড়ি অনুমতি ছাড়াই দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করেছে, যা কাস্টমস আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কমিশনারদের নির্দেশও দেয় এনবিআর। এরপর গাড়িগুলোর ব্যাপারে তদন্তে নামে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। কর্মকর্তারা দেখতে পান, ইউএনএইচসিআরের ৪৬টি গাড়ি ব্যবহার করছে অন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। জাতিসংঘের সংস্থা হিসেবে গাড়িগুলো আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় ইউএনএইচসিআর। তবে কাস্টমস আইনে শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি হস্তান্তরে এনবিআরের অনুমতি বাধ্যতামূলক। অনুমতি না নেওয়ায় ৭৬ কোটি টাকা শুল্ক পরিশোধে ইউএনএইচসিআরকে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। টাকা আদায়ে সংস্থাটির আমদানিও সাময়িক বন্ধ করে দেয় এনবিআর। প্রায় আড়াই বছর ধরে এ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী সরকার পতনের পর সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছে ইউএনএইচসিআর।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, ইউএনএইচসিআরের গাড়িগুলোর পূর্বানুমতি না থাকায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বিষয়টি সমাধান করতে বলা হয়েছে। এখানে দুটি বিষয় রয়েছে, একটি হলো জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় ইউএনএইচসিআর। আরেকটি দিক হলো, এসব গাড়ি হস্তান্তর করতে হলে আগে এনবিআরের অনুমতি নিতে হবে। তাই এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, গাড়িগুলো আইন না মেনে হস্তান্তর করা হলেও ব্যবহার হয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরের কাজে। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার নির্দেশনা পেয়েছেন তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তাদের অনুমতি নিয়ে সম্প্রতি গাড়িগুলোর নিবন্ধনও নিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কালবেলার পক্ষ থেকে ইউএনএইচসিআরের ঢাকা কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে কালবেলার মেইলের জবাবে সংস্থাটি জানায়, জাতিসংঘ সনদ ও জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ইউএনএইচসিআরের সব আমদানি শুল্কমুক্ত। তাই গাড়ি হস্তান্তরে শুল্ক ফাঁকি হয়নি বলেও অভিমত সংস্থাটির। বিষয়টি সমাধানে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়মকানুন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় বলেও জানানো হয় ইউএনএইচসিআরের মেইলে।
অভিযোগ ওঠা গাড়িগুলোর মধ্যে আছে ১৮টি ল্যান্ড ক্রুইজার প্রাডো, ৪টি ল্যান্ড ক্রুইজার অ্যাম্বুলেন্স, একটি ল্যান্ড ক্রুইজার হার্ড টপ ডিজেল, ৩টি ট্রাক, হায়েস ৫টি এবং ১৫টি পিকআপ।