নিউজ ডেস্ক::
আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ দিনের সফরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে আসছেন পোপ ফ্রান্সিস। এই সফরের প্রথম অংশে তিনি মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন। পরে ৩০ নভেম্বর আসবেন বাংলাদেশে। মিয়ানমারে এর আগে কোন পোপ সফর করেননি।১৯৮৬ সালে পোপ জন পল বাংলাদেশে এসেছিলেন।
সফরে পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারের প্রধান প্রধান বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, দেশটির সেনাবাহিনীর জেনারেলসহ প্রধান রাজনৈতিক নেতা অং সান সু চির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
মঙ্গলবার ভেটিকান থেকে প্রকাশিত পোপের সফর কর্মসূচি থেকে জানা যায়, এই সফরে পোপ বৌদ্ধ নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে মিয়ানমারে একটি এবং বাংলাদেশে একটি গণবক্তৃতা করবেন। ২৬ নভেম্বর ১০ ঘন্টার বিমান ভ্রমণ শেষে ২৭ তারিখ সোমবার ইয়াংগুন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছাবেন পোপ।
সেখানে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয়া হবে। এর একদিন পরে মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোতে যাবেন তিনি। সেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাতের পর তিনি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলবেন। আশা করা হচ্ছে, সেখানে তিনি তার এই ভ্রমণের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসবেন ৩০ নভেম্বর বিকাল তিনটায়। বিভিন্ন গির্জা ও ধর্মগুরুদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরের কার্যতালিকায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘর, তেঁজগাওয়ে মাদার তেরেসার বাড়ি, নটরডেম কলেজ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ব্যবসায়ী, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এমন একটি সময়ে পোপের এই সফর হচ্ছে যখন বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আট লাখ শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হয়ে গত ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে থাকে। তা এখনও অব্যাহত আছে।
তখন থেকে প্রতি দিনই হাজার-হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। রোহিঙ্গাদের উপরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যাকে ইতোমধ্যে গণহত্যার ‘পাঠ্য বইয়ের দৃষ্টান্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এই সংকট সমাধানের জন্য মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে ত্রাণ ও বিভিন্ন সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
সর্বশেষ মিয়ানমারের সরকারের প্রতিনিধি এসেছিলেন বাংলাদেশে। তারা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন ১৯৯২ সালের নাগরিক অধিকার আইনের ভিত্তিতে যেসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব রয়েছে, কেবল তারাই দেশে ফিরতে পারবেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে গত ২৭ আগস্ট পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার দিতে হবে।’
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রার্থনায় বলেছিলেন যে, রোহিঙ্গারা ভালো মানুষ, শান্তিপ্রিয় মানুষ, তারা খৃষ্টান নয়, কিন্তু তারা ভালো। তারা আমাদের ভাই ও বোন। এবং তারা দীর্ঘকাল ধরে নির্যাতিত। তারা শুধু ইসলাম ধর্মে তাদের বিশ্বাসের কারণে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে। তারা মায়ানমার ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তারা যাচ্ছে কিন্তু কেউ তাদেরকে চায় না।