প্রকাশিত: ০৭/১১/২০১৯ ৩:১২ পিএম , আপডেট: ০৭/১১/২০১৯ ৩:১২ পিএম

মো. মিনহাজ উদ্দীন:

২৫ আগস্ট, ২০১৯ আর ভিশন (Rohingya Vision) নামে একটি ইউটিউব টিভি চ্যানেলে সংবাদ নিয়ে হাজির বুথিডংয়ের বাসিন্দা বর্তমানে মালয়েশিয়াতে বাস করা ২১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা তরুণী তাহমিনা শারমিন। সেদিন আর ভিশন সংবাদের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে ছিলো কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সমাবেশের কথা।

তাতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, নিরাপদ পরিবেশ তৈরির আগে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাবে না। আবার তাদের সম্মতি ছাড়া পাঠানো যাবে ভাষাণ চর বা অন্য কোন স্থানে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে জানা যায় আর. ভিশন (Rohingya Vision) রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি সংবাদ সংস্থা। যা পরিচালিত হয় মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে অবস্থান করা ধনী রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে। কুয়ালালামপুরের অজ্ঞাত এক স্থান থেকে পরিচালিত আধুনিক এক অফিসে নিয়ে কাজ করেন তাহমিনাসহ আরও অনেকেই।

ইউটিউবে উল্লেখিত তথ্যে জানা যায় এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নতুন করে ‘জেনোসাইড’ শুরুর পর এই চ্যানেলটিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের তথ্য উপাত্ত ও ভিডিও নিয়ে নতুন আঙ্গিকে সংবাদ প্রকাশ শুরু হয়। সেই সময় থেকেই এই অনলাইন এই চ্যানেলটির গ্রহকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বলাই বাহুল্য চ্যানেলটি আরাকান, উখিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য স্থানে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেছেন এই প্রতিবেদক। ঐ সময় বালুখালি ক্যাম্পে কথা হয়েছিলো রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ শাহ ও যুবায়েরের সাথে। তারা মংডুর বালিবাজার স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ক্যাম্পে তাদের সময় কিভাবে কাটে? এই প্রশ্ন শুনতে শুনতে পকেট থেকে স্মার্ট ফোন করলেন শাহ। দেখালেন ঐ ইউটিউব চ্যানেল, রোহিঙ্গা ভিশন (জড়যরহমুধ ঠরংরড়হ)। মালয়েশিয়াভিত্তিক এই চ্যানেলটিতে আরাকান ও ইংরেজি ভাষায় বুলেটিন সম্প্রচারিত হয়। মোহাম্মদ শাহ জানালো, তার মোবাইলের সিম রবি’র। ক্যাম্পে মোবাইল সেবা প্রদানকারী কোম্পানি রবির সংযোগের সংখ্যা বেশি। কারণ এই অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক ভালো। তার আক্ষেপ চলতি বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। কুতুপালং এ ঐ বিশাল সমাবেশের পরই বাংলাদেশ সরকার ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার সুযোগ সীমিত করেছে। তারা এখন আর ভালভাবে থ্রি বা ফোর জি নেটওয়ার্ক পান না । তবে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কক্সবাজরের দিকে অগ্রসর হলে কিছুটা নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।

মোহাম্মদ শাহ ও যুবায়েরের আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরও একটি চ্যানেল খুবই জনপ্রিয় সেটি হলো ডিভিআর (Democratic Voice of Rohingya)। অনলাইনে রোহিঙ্গা তরুণদের আর কোনো প্ল্যাটফর্ম আছে কি না জানতে চাইলে তারা জানান এ রকম অনেক কিছুর কথা তারা শোনেন কিন্তু ক্যাম্পে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা দেখতে পান না। রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারের শঙ্কা ও সমস্যা নিয়ে এই প্রতিবেদক কথা বলেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য ও ক্যাম্পে কাজ করা কয়েকজন উন্নয়ন কর্মীর সাথে। তারা এ বিষয়ে কথা বলার আগে নাম না প্রকাশের শর্ত দেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, অনলাইনে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ ভীতিকর পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো। তারা বাংলাদেশে থেকে বাংলাদেশ বিরোধী উস্কানিমূলক প্রচারণাও চালাচ্ছিলো। যা কড়া নজরদারীতে ছিলো। ২৫ আগস্টের পর থ্রি ও ফোর জি সেবা ক্যাম্প এলাকাতে সীমিত করা হয়েছে। এতে অনেক কিছু বন্ধ করা গেছে। কিন্তু এই সব ব্যবস্থা সাময়িক। এই সঙ্কটের সমাধানে কার্যকর কিছু করতে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে হবে। আর তা না হলে যোগাযোগের পথ দীর্ঘ দিন বন্ধ রাখা কঠিন।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাতে কাজ করা এক উন্নয়ন কর্মী জানান, থ্রি ও ফোর জি সেবা বন্ধ করার পর যোগাযোগে ক্যাম্প এলাকাতে তাদের একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রোহিঙ্গারাও তাদের যোগাযোগ সমস্যায় পড়ছেন। তবে যে শঙ্কা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে তিনি একমত। কারণ এই সঙ্কট থেকে সুবিধা নিয়ে অনেক পক্ষই তৎপর। যারা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে নানা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছিলো। তবে শুধু থ্রি ও ফোর জি বন্ধ করেই নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো যাবে না। উন্নয়নকর্মীদের তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২-৩ লক্ষ অনিবন্ধিত সিম রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেগুলোর মাধ্যমে যে কোনো ধ্বংসাত্মক বা নাশকতার নেটওয়ার্ক তারা গড়ে তুলেতে পারেন। যে ক্ষেত্রে আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অন্তত ৭ লক্ষ ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের ৪০ ভাগের বেশির বয়স ২০ বছরের কম। উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এলাকাতে স্থাপিত বিভিন্ন শিবিরে তাদের বাস। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাতে বাস ৬ লক্ষ মানুষের। যা এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।

পাঠকের মতামত

আসলে কি বয়কট করছি!

আমরা বাঙালি নতুন ইস্যু পেলে দৌড়ে তা দেখার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করি। আজ বয়কট নিয়ে ...