আল আমিন রহমান ::
২০০৮ সালে আশিয়ান রিজিওনাল ফোরামের সম্মেলন বসে সিঙ্গাপুরে। জাতিসংঘ সময়সীমা বেঁধে দেয়ায় ঐ সম্মেলনেই নিজেদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দেয় বাংলাদেশ ও বার্মা ( বর্তমানে মিয়ানমার)। কিন্তু ওই বছরেরই শেষের দিকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগরের বিতর্কিত সীমায় জাহাজ পাঠায় মিয়ানমার। জবাবে ওই এলাকায় তিনটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায় বাংলাদেশ। মিয়ানমারের জাহাজ প্রত্যাহার করে নিতে জান্তা সরকারকে চাপ দিতে এবং বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতেই ওই পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ।
এই সঙ্কটময় সময়ে বাংলাদেশ সীমান্তে হাজারো সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশের চাপের মুখে এক সপ্তাহের মধ্যেই নিজেদের জাহাজ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এর ফলে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ট্রাইব্যুনালে (আইটিএলওএস) মামলা হওয়ার আগ পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে বঙ্গোপোসাগরের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি অমীমাংসীতই থেকে যায়।
২০১২ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির হামবুর্গে ওই মামলার রায় হয়। রায়ে বঙ্গোপসাগরের আনুমানিক ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪শ’ ৭১ স্কয়ার কিলোমিটার জলসীমার মধ্যে বাংলাদেশ পায় ১ লাখ ১১ হাজার ৬শ’ ৩১ স্কয়ার কিলোমিটার এলাকা। আর মিয়ানমার পায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৮শ’ ৩২ স্কয়ার কিলোমিটার।
মিয়ানমারের সাথে এই সীমান্তবিরোধে জয়ের দাবি করে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রত্যেকটি জয়ের জন্য মূল্য দিতে হয়, বাংলাদেশকেও দিতে হয়েছে। ওই ঘটনার ঠিক ৫ বছর পর, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশকে ওই জয়ের চড়ামূল্য চুকাতে হচ্ছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের বলি হতে হয়েছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়কে। রোহিঙ্গাদের তারা নিজেদের নাগরিক হিসেবেও পরিচয় দিচ্ছে না। বরং তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন,গণধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি। এর জেরে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিকতার খাতিরে বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে। কিন্তু শিবিরগুলোতে তাদের স্থায়ীত্ব বাড়ছে। তার ওপর রোহিঙ্গাদের জন্মহারও বেশি। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আর এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আগামীতেও বহন করতে হবে বাংলাদেশকে।
লেখক : সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট। মূল ইংরেজি থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত।
আমাদের নতুন সময়