বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরটি মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। কয়েক শ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সেখানে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, অপহরণ, খুন, অস্ত্রবাজির পাশাপাশি মাদক কারবার করে আসছে। এই সন্ত্রাসীরা সোনা চোরাচালানেও জড়িত। সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে রয়েছে কথিত আরসাপ্রধান দাবিদার আতা উল্লাহ জনুনী। এই ব্যক্তি মিয়ানমার সরকারের গুপ্তচর হিসাবে কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। শূন্যরেখায় এখন পাঁচ হাজার মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এদের ওই স্থান থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নেওয়ার প্রতি জোর দিয়েছেন অনেকে। তা না হলে সন্ত্রাসীরা ওই স্থানটিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের ক্ষতি করে চলবে। সোমবার শূন্যরেখায় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে ওই সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর একজন কর্মকর্তা। গুলিবিদ্ধ হন র্যাবের একজন সদস্য।
অভিযোগ আছে, আরসা নামের একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে আতা উল্লাহ জনুনী মিয়ানমার সরকারের হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার থাকা রোহিঙ্গাদের জনপ্রিয় নেতা মুহিবুল্লাহকে গত বছর তার লোকজন হত্যা করে। এরপরই ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে আরসা নামধারী সন্ত্রাসীরা। এখন তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকা ছাড়াও উখিয়ার রহমতের বিল এলাকায় ঘাঁটি গড়ে তুলেছে নবী হোসেন, কুখ্যাত হাকিম ডাকাত, জাবু, মাস্টার মুন্না মাদক চোরাচালানে জড়িত কয়েকশ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী।
তুমব্রু সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর, আবুল কালামসহ আরও কয়েকজন জানান, শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫ শতাধিক সন্ত্রাসীর নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে। উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে খুনখারাবির সঙ্গে জড়িতরাও সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। এই সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পতিভাবে ব্যবহার করছে মিয়ানমার। দ্রুত শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে না নিলে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের মিয়ানমারে পাঠাতে না পারলেও ভাসানচর বা অন্য কোনো স্থানে সরিয়ে নেওয়া উচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে শূন্যরেখায় ঘাঁটি গাড়া সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ রয়েছে। এই সন্ত্রাসীদের বিদেশি কয়েকটি এনজিও মদদ দিচ্ছে। নানা কায়দায় বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে চাচ্ছে ওই এনজিওগুলো।
রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখা একটি গোয়ন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, শূন্যরেখায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পটিতে কয়েকশ সন্ত্রাসী ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। তারা মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িত। সোমবার ঘটনার জন্য ওই সন্ত্রাসীরাই দায়ী। খালেদ নামের এক মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের ওপর গুলি চালানো হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা ৮ এপিবিএন-এর সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, মূলত শূন্যরেখায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ক্যাম্পটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। দুষ্কৃতকারীরা সেখান থেকে রাতের অন্ধকারে এসে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আবার সেখানে ফিরে যাচ্ছে। এ কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এবং স্থানীয় বাংলাদেশিদের টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনতিবিলম্বে শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শূন্যরেখায় রোহিঙ্গাদের বসবাস আমাদের দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। শুনেছি সেখানে রোহিঙ্গা মাদক কারবারিরা ঘাঁটি গেড়েছে। তারা মাদক পাচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত।
তিনি বলেন, আমি শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
সুত্র: যুগান্তর