মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ড।
ওই বৈঠকে যোগ দিতে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠকটি হওয়ার কথা। বাংলাদেশে বিদ্যমান রোহিঙ্গা সমস্যা আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামী বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সীমান্তবর্তী দেশগুলোর করণীয় নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ড।
বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়া মিয়ানমার, ভারত, চীন, লাওস ও কম্বোডিয়া যোগ দেবে।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মূলত মিয়ানমারের পুরো পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকের বিষয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, থাইল্যান্ডে মিয়ানমার নিয়ে আলোচনা হবে, আমাদের মূল এজেন্ডা হবে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও অধিকারের সঙ্গে ফেরত নেয়ার বিষয়টি। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করব।
তৌহিদ হোসেন আরো বলেন, মিয়ানমারে এখন একটা যুদ্ধাবস্থা চলছে। যুদ্ধাবস্থায় অনেক কিছুই সাবধানে করতে হয়। তবে এটা তো স্থায়ী হতে পারে না। একটা সময় কোনো ঝুঁকি না নিয়ে আমরা স্বাভাবিক রুটে ফিরে আসবো।
তিনি বলেন, ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরাপদে এবং অধিকারের সঙ্গে ফেরত নিতে হবে। আজকের বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। সেখানে একটি যুদ্ধ চলছে।
বাংলাদেশের একটাই লক্ষ্য, যখন মিয়ানমার শান্ত হবে, তখন যাতে ফেরত পাঠানো যায়। এ লক্ষ্যেই কাজ করবে বাংলাদেশ।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, লাওস ও কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দিলেও এখনো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে শেষ পর্যন্ত চীনের পক্ষে দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা বলছে সূত্রটি।
অন্য একটি সূত্র বলেছেন, ব্যাংককে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা না হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। তবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি বিশেষ করে, সম্প্রতি আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ২৭০ কিলোমিটার এলাকা দখল নিয়েছে; এ বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে চীন আন্তরিক বলে উপদেষ্টাকে বার্তা দেন রাষ্ট্রদূত। তারা আসন্ন ব্যাংকক বৈঠক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা সংকট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে বৈঠকে হয়। সেখানে ব্যাংকক বৈঠক নিয়ে তারা গুরত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে একটি সূত্র।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ২৭০ কিলোমিটার এলাকা দখল নিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা আরাকান আর্মি। এছাড়া, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মংডুর সেনা ঘাঁটি দখলে নিয়ে ১৬৮ মাইল এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পাঠকের মতামত