ভবিষ্যতে বিচারের সুবিধার্থে রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য সংগ্রহে নতুন একটি আধা-বিচার বিভাগীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের নতুন মানবাধিকারপ্রধান মিশেল ব্যাশেলেট। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের
(ইউএনএইচআরসি) সদর দপ্তরে প্রথম বক্তৃতায় গতকাল সোমবার তিনি এ আহ্বান জানান। খবর রয়টার্স ও ব্যাংকক পোস্ট।
মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৯তম অধিবেশনের উদ্বোধনী সেশনে ব্যাশেলেট বলেন, ‘মিয়ানমারবিষয়ক একটি স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থাপনে এই কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এই সংস্থা মিয়ানমারে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর তথ্য সংগ্রহ, একত্রিত, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করবে। যাতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে এসব অপরাধের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার সম্ভব হয়।’ তিনি সংস্থাটি স্থাপনে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঠাতে ৪৮ সদস্যের এ কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যাশেলেট যে সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, একই ধরনের একটি সংস্থা এর আগে সিরিয়ায় সংঘটিত অপরাধের তথ্য সংগ্রহে গঠন করেছে জাতিসংঘ। ব্যাশেলেট বলেন, মিয়ানমারের অপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটররা যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছেন সেক্ষেত্রে ওই সংস্থার কাজ পরিপূরক ও সহযোগিতামূলক হবে।
চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেলেট ১ সেপ্টেম্বর ইউএনএইচআরসির নতুন হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
গত মাসে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন জানায়, গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ ৬ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করারও কথা বলা হয় মিশনের প্রতিবেদনে। এরপর গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আইসিসির তিন সদস্যের একটি বিচারক প্যানেল জানায়, রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে।
আইসিসির এ সিদ্ধান্তকে গতকাল ব্যাশেলেট বলেন, ‘ক্রমাগতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ধারা এটিই দেখিয়ে দেয় যে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে একেবারে দায়মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দায়মুক্তির অবসান ঘটাতে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবর্ণনীয় দুদর্শা তুলে ধরতে আইসিসির সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
এদিকে, গতকাল জাতিসংঘের ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।