ডেস্ক রিপোর্ট::
রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য সংগ্রহে গিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।
রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের অভিযোগে দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন ইয়াঙ্গুন উত্তর জেলা বিচারক ইয়ে লুইনের আদালত। যদিও ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সোয়ে (২৮) নামে দুই সাংবাদিক প্রথম থেকেই তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
মিয়ানমার গত বছরের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্মূলে দমন-পীড়ন শুরু করলে সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যান এ দুই সাংবাদিক। কিন্তু ডিসেম্বরে তাদের আটক করা হয়। তখন দাবি করা হয়, গোপন সরকারি নথিপত্র বহনের সময় তাদের ধরা হয়েছে।
তবে সাংবাদিক দু’জন বলেন, তারা গণমাধ্যমের নীতিমালা মেনেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগ অস্বীকারের পাশাপাশি তারা আদালতকে বলেন, ইয়াঙ্গুনের একটি রেস্তোরাঁয় তারা বসে থাকলে দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের হাতে কিছু কাগজ ধরিয়ে দেন। এরপরই অন্য কর্মকর্তারা তাদের আটক করেন। সাজানো বিষয়টি তখন ভিডিওতে ধারণ করেন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে তাদের বক্তব্য আমলে না নিয়ে বিচারক বলেন, দুই সাংবাদিক সরকারি গোপনীয়তা আইনের ৩.১.সি ধারা লঙ্ঘন করায় তাদের সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের আটক হওয়ার দিন (১২ ডিসেম্বর) থেকে এ সাজা কার্যকর হবে।
গত বছরের ২৪ আগস্ট রাতে তথাকথিত আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলার অভিযোগ তুলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। এই প্রেক্ষাপটে প্রাণে বাঁচতে পরদিন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় লাখো রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের সেই ঢল এখনও থামেনি।
আগে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের কারণে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও এই দফায় সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। অনেক মানবাধিকার সংস্থার মতে, এই এক বছরে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ করা হয়েছে অসংখ্য কিশোরী ও তরুণীকে।
এই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূলাভিযানের পাঠ্যবইয়ে উল্লেখের মতো উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘ। এমনকি সম্প্রতি এজন্য দায়ী মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফসহ শীর্ষ জেনারেল ও কর্মকর্তাদের বিচার হওয়া উচিত বলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জীবনে এমন কালো অধ্যায় নামিয়ে সমালোচিত হলেও এক বছরের মাথায় পেশাদার দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিয়ে মিয়ানমার বৃদ্ধাঙ্গুলিই দেখালো বিশ্ব সম্প্রদায়কে।
পাঠকের মতামত