নুরুল আমিন হেলালী::
মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন খোলা ও পাইকারী বাজরে লাগামহীন সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে থেকে সরকারের পক্ষ থেকে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে বার বার আশ্বস্ত করা হলেও এক শ্রেণীর অতি মূনাফালোভী মজুদদার ব্যবসায়ীদের কারণে এর সুফল ভোক্তাসাধারণ ভোগ করতে পারছেনা। এছাড়া শহরে স্থায়ী এবং অস্থায়ী বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্যের দামে বিস্তর তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি শহরের পাইকারী মুদির দোকান গুলোতে সরকার প্রদত্ত নিত্যপণ্যের দামের তালিকাও টাঙানো হয়নি। রমজান মাসে পন্য দ্রব্যের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির মুনাফাদস্যু ও মওজুদদার ব্যবসায়ী পিয়াজ, আদা, ডাল, ছোলা, রসুন, ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সরেজমিনে শহরের বৃহত্তম পাইকারী ও খুচরা মার্কেট বড়বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে পেয়াজ, আদা, ডাল, ছোলা, ডিম, মাছ, মাংস, ও কাঁচা শাকসবজির দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তবে কিছু কিছু পন্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রমজানে বাড়তি চাহিদা থাকায় বাজারে ক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ারমত। বাড়তি চাহিদার কারণে কিছু কিছু পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও মাছ, মাংস, সবজির দাম সাধারন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজার করতে আসা কলাতলির ফ্রেশ ইন রেস্তোরার মালিক নুরুল কবির, আইনজীবি রফিক ও আবু বক্কর এবং আব্দু জলিলসহ কয়েক দিন মজুর ক্ষুব্ধস্বরে বলেন, দেশটা মগের মুল্লুখ হয়ে গেছে একটু সুযোগ পেলেই নিজেদের ইচ্ছেমত জিনিসপাতি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। যেন দেখার মত কেউ নেই। সরেজমিনে বড়বাজার, বাহারছড়া বাজার, কানাইয়া বাজার, কলাতলি বাজার, কালুরদোকানসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের কেজি ২২ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা, আদা প্রতি কেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, চিনি ৪২ টাকা থেকে ৬২ টাকা, ছোলা ৫৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা, মসুরডাল ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা, ডিম প্রতি হালি ২৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ টাকায় দাড়িয়েছে। প্রতি কেজি রসুন ১৬০ টাকা থেকে ২২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, , আটা, ময়দা, গুড়ো দুধ ও তরল দুধের দাম। অন্যদিকে কাঁচা শাকসবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুনহারে। কাচা মরিচ ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি শসা ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, ঝিঙে ৩০ টাকা , চিচিঙ্গা ৩০ টাকা , পটল ৪০ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা , করলা ৪৫ টাকা, ঢেঁড়শ ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেড়ে গেছে ধনিয়া পাতা, বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচের দাম। গত দুইদিনের ব্যবধানে বেগুন ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে কেজিতে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির বাজারমূল্য প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। বাহারছড়া বাজারে বাজার করতে আসা শহরের বাসিন্দা চাকুরিজীবি রমজান আলী এই প্রতিবেদককে জানান, রাজধানী শহরে বাজার তদারকিতে নিয়মিত টহল থাকলেও কক্সবাজার শহরে বাজারগুলোতে তদারকি না থাকায় নিজেদের ইচ্ছেমত সবজির দাম নিচ্ছে বিক্রেতারা। বড়বাজারের সবজি বিক্রেতা আবু জাফর জানায়, পাইকারী বাজারে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মাছ-মাংসের দোকান ঘুরে দেখা যায় ছোট বড় সব প্রজাতির মাছ, মাংসের দাম আকাশ ছোঁয়া। বাজারে চাহিদার তুলনায় মাছ,মাংসের সরবরাহ কম থাকায় বিক্রেতারা লাগামহীনভাবে দাম হাঁকাচ্ছে যা সাধারনক্রেতাদের নাগালের বাইরে। গরুর মাংস কেজিতে ৩৮০ থেকে ৪৮০ টাকা,খাসি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ফার্ম মুরগি ১৫৫ থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৩০ টাকা, রুই মাছ ২৫০ টাকা, টেংরা ৪০০ টাকা, কোরাল ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, লইট্রা ১৫০ টাকা,পাঙ্গাস ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিমত প্রতিদিন বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।