আগামীকাল রবিবার পালিত হবে এবারের হজ। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকেই হজযাত্রীরা ছুটতে থাকেন ‘তাঁবুর শহর’ শহর খ্যাত মিনার দিকে। সবার মুখে তখন ছিল ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ (বান্দা হাজির হে প্রভু দরবারে তোমার)। হজের দিন পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে হাজিদের মুখে এই তাকবির ধ্বনি অব্যাহত থাকবে।
মক্কা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের মিনায় শনিবার অবস্থান করবেন হজযাত্রীরা। রবিবার ভোরে তারা রওয়ানা করবেন আরাফাতের ময়দানে। সেখানে অবস্থান করবেন দিনভর। আরাফার মাঠে অবস্থান করাই হচ্ছে হজের মূল কাজ। এদিন আরাফাতের মাঠে জড়ো হবেন সারা বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান, যেখানে রয়েছে বাংলাদেশেরও লক্ষাধিক হজযাত্রী।
এবার হজ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা। বিশেষ করে মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ হাজিদের ভাগ ভাগ করে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। গত বছর মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে ৭১৭ জন হাজির মৃত্যু হয়। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে এ সংখ্যা দুই হাজার ছাঁড়িয়েছিল। এরপরই হজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।
হাজিরা রবিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে রাতে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে রাত যাপনের পর ১০ জিলহজ সোমবার মিনায় ফিরে আসবেন। সেখানে তারা কোরবানি করবেন এবং শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। পরে তিন দিন মিনার তাঁবুতে অবস্থান করবেন। এই সময়ের মধ্যে মক্কায় গিয়ে ফরজ তওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে হাজিদের। ১২ জিলহজ মিনা থেকে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। যারা আগে মদিনায় রওজা জিয়ারতে যাননি তারা হজের পরে যাবেন। শুরু হবে ফিরতি হজ ফ্লাইট।
এ বছর হাজিদের পরিচয় নিশ্চিতের জন্য ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি ব্রেসলেটে বারকোড রয়েছে এবং এটি অ্যাপসের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযুক্ত। এই ব্রেসলেটে হাজিদের ব্যক্তিগত এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য রয়েছে। এটি তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি জরুরি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা দেবে। সেই সঙ্গে তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হবে এই ব্রেসলেটের মাধ্যমে।
সরকারি বার্তা সংস্থা সৌদি গেজেট জানিয়েছে, অবৈধ হজযাত্রীদের আটকে বাহিতা ও হাদা এলাকায় এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে হাজিদের নিরাপত্তায় দ্রুত তিন হাজার উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র স্থানান্তরে ১৭ হাজার কর্মী মোতায়েন করেছে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ। হজের পাঁচ দিন মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলো পরিষ্কারের জন্য ২৬ হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য মক্কায় পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ আটটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মিনা, আরফাতের ময়দান ও মুজদালিফায ২৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
চলতি বছর মাতাফের (পবিত্র কাবার চারপার্শ্বে তাওয়াফের স্থান) স্থানও সম্প্রসারিত করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। মক্কা শরিফের রক্ষাণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার ঘণ্টায় ৩০ হাজার হাজি একসঙ্গে তাওয়াফ করতে পারবেন। এর আগে এখানে ১৯ হাজার হাজি একসঙ্গে তাওয়াফ করতে পারতো।
পাঠকের মতামত