মিয়ানমারে মংডুর তিনটি সীমান্ত চৌকিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর চোরাগুপ্তা হামলা ও অস্ত্র লুটের জের ধরে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিশেষ মহল। আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন লঙ্ঘন করে টেকনাফে শরণার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় বানচাল করে দেয়া হয়েছে তাদের বিক্ষোভ। শরণার্থী ক্যাম্পে কোন ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে রোহিঙ্গা মাঝিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আরএসও নেতাদের উস্কানি পেয়ে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে।
সূত্র জানায়, মিয়ানমারের মংডুতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর দেশটির প্রশাসন প্রচলিত আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাকড়াও করছে সন্ত্রাসী ও দোষীদের। সংঘটিত ঘটনার পর যাতে রাখাইন-রোহিঙ্গাদের মধ্যে জাতিগত হাঙ্গামা সৃষ্টি না হয় এ জন্য সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে রাখাইনদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমরা চরম আতঙ্কে থাকলেও মাতৃভূমি ত্যাগ করে বিতাড়িত হওয়ার মতো কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এখনও। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা স্বাভাবিকভাবে বসবাস করছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বিশেষ মহলের প্ররোচনায় আরএসও জঙ্গীগোষ্ঠী তিলকে তাল করে বাংলাদেশে আশ্রিত শরণার্থীদের উস্কানি দিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পুরনো কিছু ছবি পোস্ট করে মিয়ানমারে মুসলিমরা গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে গুজব ছড়াচ্ছে। উত্তেজনা ছড়াতে মৃতদেহের ছবি সংবলিত ব্যানার ও পোস্টার প্রিন্ট করে আরএসও ক্যাডাররা শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারে দীর্ঘ ২৫ বছর পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে আউং সান সু চি’র দল (এনএলডি) ক্ষমতা গ্রহণে ‘গণতন্ত্রের জাগরণ’ বলে মন্তব্য করে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত কয়েক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, অনেক বছর হয়েছে রিফুইজি হিসেবে। এভাবে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না মোটেও। আমরা স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। তবে বড় বাধা আরএসও ক্যাডার ও ক্যাম্পে তাদের সহযোগীদের। মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে আগ্রহীদের আরএসও ক্যাডাররা প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়। অতিতেও বহু শরণার্থীকে লাঞ্ছিত করেছে তারা। আরএসও নেতা মাস্টার আয়ুব, মৌলভী নুর হোসেন, আবু তাহের, মৌলভী ইউনুছ, কুতুপালং অনরেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের কথিত সভাপতি আবু ছিদ্দিক ও আবু বক্করের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের সহযোগী শরণার্থী। তাদের কাছে রয়েছে দামী মুঠোফোন ও ল্যাপটপ। সম্প্রতি আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) প্রথম সারির নেতা মাস্টার আয়ুব ও আবু বক্করসহ ১১আসামির বিরুদ্ধে বিজিবি হাবিলদার বাবুল মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেছে টেকনাফ থানায়। তারা বাংলাদেশের অখ-তা, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হত্যা, গুরুতর জখম ও অপহরণসহ রাষ্ট্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন তথা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য ধৃত তিন জঙ্গীসহ ৩০ জুলাই শামলাপুরে গোপনে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। ওই আরএসও নেতাদের গ্রেফতার করতে টেকনাফ পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি আবদুল মজিদ।
সুত্র: জনকন্ঠ
পাঠকের মতামত