জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) মালয়েশিয়াকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। শরণার্থীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। খবর রয়টার্সের।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) জানিয়েছে, গত দুই মাস থেকে শত শত শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। এই শরণার্থীদের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থনা করা নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
ইউএনএইচসিআর-এর সহকারী হাই কমিশনার গিলিয়ান ট্রিগস এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারের নাগরিকরা যারা এরই মধ্যে বিদেশে চলে গেছে এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পেতে চাইছে, সেসময় তাদের জোর করে দেশে ফিরিয়ে দেয়া উচিত নয়। এটি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা বিষয়ক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গিলিয়ান ট্রিগস উল্লেখ করেন, মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থেকে তাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠানোর একাধিক খবর পেয়ে ইউএনএইচসিআর গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এদিকে, ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র সাবিহা মান্তু জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কেবল গত দুই মাসেই কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের শত শত নাগরিককে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ফেরত পাঠিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। মানুষ যেখানে জীবন ও স্বাধীনতার হুমকি এবং ক্ষতি ও বিপদের মুখে পড়ে সেরকম জায়গায় তাদেরকে ফেরত পাঠানো উচিত নয়।
সাবিহা মান্তু জানান, সবশেষ ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইউএনএইচসিআর-এর যোগাযোগের পরও জোর করে মিয়ানমারের এক আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে ফেরার পর সেই আশ্রয়প্রার্থীর ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা যায়নি।
জানা যায়, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কিংবা মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত মিয়ানমার দূতাবাস সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছিল, মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গত ৬ অক্টোবর মিয়ানমারের ১৫০ জন নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে সাবেক নৌ কর্মকর্তারা আছেন কিনা তা উল্লেখ করেনি দূতাবাস।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাত হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে সহিংসতা, অশান্তি চলছে। এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে জান্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের মাত্রাও বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে আটক হয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক কর্মী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও শিক্ষকসহ গণতন্ত্রপন্থি ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
জান্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে বহু রোহিঙ্গাও আছে।