মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা ভারতে শরণার্থী হয়েছিলাম। ঐসময় শরণার্থীর সন্ধিবিচ্ছেদ আমারা অনেকেই করতাম এইভাবে "সর +নাত্থি ( লাত্থি) = শরণার্থী। আমরা মনে করতাম একদিন হয়তো আসবে যেদিন ভারত আমাদের ভার বহন করতে না পরে পূর্ব পাকিস্তানে জোর করে ফেরৎ পাঠাবে। প্রয়োজনে লাথি মেরে হলেও। যদি মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ প্রলম্বিত হয়। যদিও ন'মাসে ভারতে তেমন অবস্থার অবতারণা হয়নি আমাদের নিয়ে।
দেশে দেশে যুদ্ধ হচ্ছে চলমান সময়ে এবং সমানে মানুষ শরণার্থী হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হতে। আমরা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখবো এই শরণার্থী সমস্যার মূলে রয়েছে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার এক অশুভ পাশাখেলার নোংরা প্রতিযোগিতা। উদ্দেশ্য বিবাদমান দেশে এবং অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উষ্কে দিয়ে অস্ত্র বিক্রি করা। আর এই অতীব নিষ্ঠুর রসিকতার সাথে জড়িত সমস্ত পশ্চিমা বিশ্ব।
পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির মূল চালকা শক্তি হলো অস্ত্র ব্যাবসা। সমস্ত পশ্চিমা শক্তি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জোর করে হলেও পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দুর্বল ধনী দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র গিছিয়ে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব ও কাতারে কিছুটা জোরকরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের আমেরিকার অস্ত্র বিক্রির উদাহরণ এর পোষকতা করে।
অতিসম্প্রতি মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে অতীব নিষ্ঠুর জাতিগত নির্মূলীকরনণের উদ্দেশ্যে অত্যাচার করে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। যা এখনো চলমান আছে। এই অতীব নিষ্ঠুর কাজে মিয়ানমারের সহযোগি হয়েছে চীন, রাশিয়া এবং ভারত। মিয়ানমারের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মির ( আরসা ) আবির্ভাব ঘটেছে যারা মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আক্রমণ করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসা'র জন্ম হলো। এর জন্য দায়ী কে? এর জন্য দায়ী মিয়ানমারের নিষ্ঠুরতা রোহিঙ্গাদের প্রতি। যুগ যুগ ধরে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রতি অতীব আমানবিক ব্যবহার করে আসছে মিয়ানমারের সরকার ও জনগণের একটি অংশ।
মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পরবাসী করে রেখেছে। তাদের নাগরিকতা কেড়ে নেওয়া হয়েছ , বঞ্চিত করা হয়েছে শিক্ষা, সম্পূর্ণ নাগরিক ও মানবিক অধিকার থেকে। এই অবস্থায় এটা স্বাভাবিক যে রাখাইনে আরসা'র উত্থান ঘটেছে। এর জন্যতো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দায়ী করা যায় না। কিন্তু মিয়ানমারের নিষ্ঠুরতার বলি হয়েছে সমস্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যার জন্য তারা কোনভাবেই দায়ী নয়।
যখন কোনো দেশের সরকার তার নিজের দেশের নির্দোষ জনগনের উপরে অন্যায় অত্যাচার করে কিংবা দেশী বিদেশী শক্তির দ্বারা দেশের নাগরিকরা নির্যাতনের শিকার হয়ে শরণার্থী হয় প্রচলিত ধারণায় আমরা তাদের অসহায়, নির্যাতিত ও অত্যাচারিত বলে নিজ দেশে আশ্রয় দেই মানবিক কারণে যেমনটা বাংলাদেশ করেছে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে।
এর পরে শুরু হয় শরণার্থীদের লালন পালনের কাজ ইউএনএইচসিআর এর মাধ্যমে। ভাবটা এই, বুড়া আমায় মারিছে, মাইরের জাগায় আবার মলম লাগাইছে । এই অশুভ চক্র থেকে আমাদের এবং বিশ্বকে বের হয়ে আসতে হবে।
শরণার্থীরা করুণার পাত্র কেন হবে? তারা দয়াদাক্ষীণ্যের পাত্র নয়। যে দেশের এবং যে শক্তির অশুভ হস্তক্ষেপের কারণে তারা শরণার্থী হয়েছে সেই দেশ এবং শক্তির বিরুদ্ধে শরণার্থীদের রুখে দাঁড়াতে এবং প্রয়োজনে যুদ্ধ করে নিজের অধিকার সংরক্ষণের সব ধরনের সহযোগিতা ও সহায়তা শরণার্থীদের দিতে হবে। শুধু ত্রাণ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করার দিন শেষ হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি। এটাই আজকের বাস্তবতা। এটা করতেই হবে তানাহলে বিশ্বে শরণার্থীর স্রোত বন্ধ করা সম্ভব হবেনা।
জেনারেল আ ল ম ফজলুল রহমান