চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা প্রায় সম্মিলিত কণ্ঠে তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন, একইসঙ্গে বলছেন শাকিব খানকে আর ক্ষমা করা হবে না। কেউ বলছেন, তাদের এই আন্দোলন মন্ত্রীর ‘অপকর্মে’র বিরুদ্ধে। আবার কেউ বলছেন, এই ইস্যু নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সময় এসেছে এবার। ক্ষোভ ঝরেছে শাকিব খানের বিরুদ্ধেও। এই জোটের যে দু’জন সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন- তাদেরকেও অব্যাহতি নেওয়ার পরামর্শ দিলেন কেউ কেউ।
আর এসব অভিমত উঠে আসে শুক্রবার (২৩ জুন) বেলা সাড়ে চারটা থেকে শুরু হওয়া জোটের এক জরুরি সভায়।
রাজপথে নেমে তুমুল আন্দোলনের পরেও আলোচিত-সমালোচিত যৌথ প্রযোজনার দুই ছবি ‘নবাব’ ও ‘বস-টু’ আনকাট সেন্সর পায় ঈদের জন্য। আর এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই ঐক্যজোটের নেতারা এই জরুরি সভা করেন বিএফডিসির পরিচালক সমিতির কার্যালয়ে।
সভায় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, সিনিয়র অভিনেতা ফারুক, আলমগীর, রিয়াজ, পপি, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, ডিপজলসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এতে তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে শিল্পীদের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘যেভাবে চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে সেটা ঠেকাতে করণীয় আজই ঠিক করতে হবে।’
রিয়াজ বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। আমরা আবেগ থেকে যাই বলি না কেন, আমাদের চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হলে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। আমি চাই সেন্সরবোর্ড থেকে গুলজার ভাই ও দিলু ভাই অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। তারা সেটা করবেন আশা করি।’
প্রযোজক খসরু বলেন, ‘আমাদের এবারের আন্দোলন হবে মন্ত্রীর অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন।’ নায়ক ফারুককে নিয়ে কটু মন্তব্য করার জন্য শাকিব খানের শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অঞ্জনা, রোজিনা, আলমগীর, গুলজার, ফারুক ও মিশা সওদাগর
অন্যদিকে নায়ক আলমগীর বলেন, ‘শাকিব খানকে আর ক্ষমা নয়। এর আগে শাকিবের ঝামেলা মিটিয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম। এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ফারুক ভাইকে নিয়ে যে কমেন্ট করেছে তা ক্ষমা করা হবে না। তাকে বয়কট নয়, তার শাস্তি চাই। সংগঠনগুলো তার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবে তাকে স্বাগত জানাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা সাংস্কৃতিক বিনিময় চাই কিন্তু তার নামে অনিয়ম চাই না। আমরা দেরি করে আন্দোলন শুরু করায় ছবি দুটি সেন্সর পেয়ে গেছে। ঈদের পর যেন এই আন্দোলন আরও বেগবান হয়।’
আর প্রযোজক-অভিনেতা ডিপজল বলেন, ‘আমাদের জান থাকতে বিদেশি ছবি চালাতে দিবো না, প্রয়োজনে আমার ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে ১০০ মেশিন বসাবো সিনেমা হলগুলোতে।’
সভায় যৌথ প্রযোজনার নামে চলমান এই প্রতারণার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত হয় জোট নেতাদের মধ্যে।
বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এই সভা শেষ হয়। যেখানে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের ১৬ সংগঠনের নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয় এবং শিল্পী সমিতি থেকে শাকিব খানের সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যৌথ প্রযোজনার নানা অনিয়ম নিয়ে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের আন্দোলন শুরু হয় ১৮ জুন সকাল থেকে। অপরদিকে প্রযোজক, বুকিং এজেন্ট ও হল মালিকরা ‘গো’ ধরেছেন এই বলে- যৌথ প্রযোজনার ছবিই চালাবেন তারা, সেটা যেভাবেই হোক। কলকাতার সঙ্গে জাজের ‘বস-টু’ ও ‘নবাব’কে ঘিরেই মূলত চলমান বিতর্ক।
এরই মধ্যে ১৮ জুন রাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হয় জাজ এর নেতৃত্বে। এ সম্মেলনে প্রযোজক, বুকিং অ্যাজেন্ট, হল মালিক ও শিল্পীরাও উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ হুমকির সুরে বলেন, ‘এ ছবি দুটি মুক্তি না পেলে আমাদের সিনেমা হলগুলো ঈদে বন্ধ করে রাখব। কারণ এ ছবিগুলোর সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক ইনভলবমেন্ট আছে।’
প্রসঙ্গত, যৌথ-প্রযোজনার ছবি ‘বস-টু’ ও ‘নবাব’ ছবি দুটির বিরুদ্ধে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা সঠিকভাবে মানা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে আসছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা। আর এই ঐক্যজোটের নেতৃত্বে আছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতিসহ বেশ ক’টি চলচ্চিত্র সংগঠনের নেতারা।