উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বেপরোয়া আচরণের জন্য যে ছাত্রলীগকে নিয়ে দু:শ্চিন্তার অন্ত ছিলো না আওয়ামী লীগের, সেই ছাত্রলীগই এখন ‘স্বস্তি’ বয়ে আনছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘শৃঙ্খলা ফিরে’ এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটিতে।
সরকারের উন্নয়ন বার্তা নিয়ে তৃণমূলে পৌঁছানোর পাশাপাশি মানবিক আচরণের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের দিকে মনোযোগ ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের। হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারে বর্তমান তাদের বেশ কিছু কর্মকাণ্ড বিভিন্ন মহলে প্রশংসাও কুড়িয়েছে। ছাত্রলীগ ‘শৃঙ্খলিত’ থাকায় আওয়ামী লীগ তথা সরকারের মধ্যেও স্বস্তি বিরাজ করছে।
বিগত এক দশকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারিদের কমিটি হওয়ার পরদিন থেকেই ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করতে দেখা গেছে। সেখানে ব্যতিক্রম ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো হলের কক্ষেই থাকছেন।
শোভন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবেই হলে থাকছি। কেননা ছাত্রদের সংগঠনের নেতা হিসেবে যদি আমি ছাত্রদের সঙ্গে মিশি তবেই তারা আমাকে সম্মান করবে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে মাঠে নেমেছেন গোলাম রব্বানি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সবার আগে সংহতি জানিয়ে তিনি বিভিন্ন কলেজে ছুটে বেরিয়েছেন। সরকারের বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আন্দোলনকে প্রশমিত করতে, বিএনপি-জামায়াতের পাতা ফাঁদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন পা না দেয় সে জন্য ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের কৌশল পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়ায়। দায়িত্ব পালনের অতীত অভিজ্ঞতা ও মানবিক গুণাবলির জন্য রব্বানিকে ছাত্রলীগের তৃণমূলের কর্মীরা ‘মানবতার ফেরিওয়লা’ বলেও ডাকে।
গোলাম রব্বানি বার্তা২৪কে বলেন, ‘নেতৃত্ব আমানতের মতো। দেশরত্নের দেওয়া আমানত রক্ষার চেষ্টা করব আমি। ছাত্রলীগের ইমেজ পুনরূদ্ধারে কাজ করে যাব।’
ছাত্রলীগের এক নম্বর ইউনিট হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বলা হয়ে থাকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত থাকলে বাংলাদেশ শান্ত থাকে। নির্বাচনের বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শান্ত রাখার গুরু দায়িত্ব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের ওপর। তারা দু’জনেই আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। সৃজনশীল উপায়ে নিজেদের ‘ক্যারিশমা’ দেখানোর চেষ্টা করছেন তারা। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল টিএসসিভিত্তিক প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে এক ব্যানারে আনতে তারা গঠন করেছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ।’ এই ব্যানার থেকে সম্প্রতি ঢাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে স্বাগত জানাতে ৭ মার্চকে স্মরণ করতে ১৯৭১ ফুট দীর্ঘ ও ৭ ফুট চওড়া আলপনা আঁকা হয়েছিল। দৃষ্টিনন্দন সে আলপনা অনেকের নজর কাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যত্রতত্র ব্যানার ফেস্টুনের ব্যবহার, পড়ার পরিবেশ নষ্ট হয় এমন উচ্চ শব্দসম্পন্ন মাইকের ব্যবহার তারা নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষায় আগত বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর সুবিধার্থে আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত, তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, ফ্রি বাইক সার্ভিস, মেডিকেল টিম, সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা নিয়েছে, যা আগত নবীনদের মাঝে সংগঠনের ইতিবাচক ইমেজকেই বৃদ্ধি করেছে।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় অন্যান্য ইউনিটেও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা শিক্ষর্থীবান্ধব নানা কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশের প্রথম বোনস লাইব্রেরি স্থাপন করেছে। ১৫ সেট বোনস এবং এনাটমির প্রায় ১৩০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করা ‘প্রফেসর ডাঃ মনসুর খলিল বোনস লাইব্রেরি’ চমেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালেয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদ আপেলের উদ্যোগে স্থাপিত ‘জয় বাংলা’ ভাস্কর্য নজর কেড়েছে। সাম্প্রতিক বন্যা, ভূমিধ্বসসহ প্রাকৃতিক দুযোর্গে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল দেখার মত।
সম্প্রতি মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে জেব্রা ক্রসিং একেঁছে, হেলমেট পরিধান করে মোটরসাইকেল চালানোর ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ‘স্বাক্ষরতা অভিযান’ শুরু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অনলাইনে বিভিন্ন মহলের সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডার জবাব দিতে অনলাইনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। ইতোমধ্যে সংগঠনের বেশ কিছু নেতা-কর্মী সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালায় যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ‘বঙ্গবন্ধু সাইবার ব্রিগেড’ নামে একটি আইটি সেল গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে।
গত দেড় মাস নেতিবাচক খবরের শিরোনামে ছাত্রলীগ না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝেও স্বস্তি বিরাজ করছে। তারা চান ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগের ইমেজ পুনরুদ্ধারের এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আলাপকালে বার্তা২৪কে বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা অনেক যাচাই-বাছাই করে এবার ছাত্রলীগের কমিটি করে দিয়েছেন। তাই তাদের কাছে সবার প্রত্যাশা অনেকে। এখন ছাত্রলীগ যেভাবে চলছে তাতে ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশাই করা যায়।
তবে এই পথচলাতে শঙ্কার কথা জানিয়েছে ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলেন, শোভন-রব্বানী কেবলমাত্র দায়িত্ব নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করাসহ যখন বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন করবে তখন তাদের মূল দক্ষতা কিংবা মুন্সীয়ানার পরিচয় পাওয়া যাবে। এখন কমিটির প্রত্যাশায় সবাই চুপচাপ আছে। কমিটি হওয়া শুরু করলেই গ্রুপিং, ঐক্যে ভাঙ্গন, সংঘর্ষ, ব্লেমগেম মোকাবেলার নানা চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে আসবে।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের আড়াই মাস পর নানা নাটকীয়তা শেষে ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। কেন্দ্রের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটিও ঘোষণা দেন তিনি। এর মধ্যদিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা কথিত ‘সিন্ডিকেট’ সংগঠনটির কর্তৃত্ব হারায়। বার্তা ২৪
পাঠকের মতামত