হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ::
মিয়ানমার থেকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে আবারও সাঁতরে এসেছেন ৪ জন রোহিঙ্গা। ৪ জনই মিয়ানমারের বুচিডং এলাকার বাসিন্দা। ২৮ অক্টোবর শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শাহপরীরদ্বীপ জেটি ঘাটে পৌঁছে। স্থানীয় লোকজন মারফৎ খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান বলে জানা গেছে। এরা হলেন কবির আহমদ (১৯), আবদুস শুক্কুর (১৫), কামাল হোসেন (১২) কবির আহমদ (১৬)।
জানা যায়, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুচডং দামনখালী এলাকা থেকে ৪ জন রোহিঙ্গা খালি কন্টিনার বেঁধে সকাল ৮টায় নাফ নদী পাড়ি দেন। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা নাফ নদী সাঁতরিয়ে অতিক্রম করে দুপুর সোয়া ১২টায় শাহপরীরদ্বীপ পৌঁছে। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসার জন্য কোন ট্রলার না পেয়ে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলে এসেছেন বলে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। তাঁরা আরও জানান, এপারে এসে নৌকার ব্যবস্থা করে আবার ফিরে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই চলে এসেছেন। এখনও ওপারে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলেও তাঁরা জানান।
উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর পিঠে জারিকেন বেঁধে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারের বাসিন্দা ১১ জন রোহিঙ্গাকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ কোস্ট গার্ড স্টেশনের কর্মকর্তাগণ বিজিবি’র নিকট হস্তান্তর করেছিল। মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও হত্যার হাত থেতে রেহায় পাওয়া জন্য প্রাণে বাচঁতে তেলের জারিকেনের সহযোগিতায় সাঁতরিয়ে নাফনদী পাড়ি দেওয়া ১১ রোহিঙ্গা পুরুষকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। ওরা ১১ জন ছিলেন বুচিডং পেরাংপুরুর কামাল হোসেন (১৫), আনছার উলাহ (১৫) সিংডংয়ের ফয়েজ উলাহ (১৭), ইসমাইলপাড়ার হামিদ হোসেন (১৩), হামজ্জাপাড়ার সৈয়দ হোসেন (৩০), তেরংপাড়ার আবদুল মতলব (৩০), হাইরমোরা পাড়ার মোহাম্মদ উলাহ (২৬), হাজুরীপাড়ার মোহাম্মদ আলম (১৮), পুইমালির মোহাম¥দ রিয়াজ (১২), ইমাম হোসেন (১৮) ও রমজান আলী (৩০)।
সেই ১১ রোহিঙ্গাদের বক্তব্য ছিল ‘আমাদের মা-বাবা এবং আতœীয়-স্বজন সকলে মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রামে। আমাদের এলাকায় চরমভাবে খাদ্য সংকট চলছে। বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক দিন ধরে রোহিঙ্গাদের আনার জন্য মিয়ানমারে যাচ্ছেনা। একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে মৃত্যু ভয়। আমাদের মা-বাবা এবং আতœীয়-স্বজন সকলে পাহাড়ে জঙ্গলে ধান ক্ষেতে লুকিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে কোন রকম প্রাণ নিয়ে বেঁচে আছে। ওপারে নাফ নদী এবং সাগর তীরের কাছাকাছি মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও মগদের চোখ এড়িয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশে চলে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্ত ট্রলারের অভাবে আসতে পারছেনা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাড়ি দিতে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ এবং চেষ্টা করেও বাংলাদেশী ও আমাদের দেশের নৌকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। আমরা মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে নৌযান না পেয়ে সাঁতার কেটে বাংলাদেশে এসেছি’।
এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁতার কেটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সাঁতরে আসা রোহিঙ্গা যুবকরা বলেন ‘মিয়ানমার বাহিনী ও মগদের বহুমুখী নির্যাতন আর সহ্য করা যাচ্ছেনা। এতদিন যারা চলে আসেনি তাদের উপরও নির্যাতন চলছে। উপরন্ত কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টগুলো কেড়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে এসে মা-বাবা ভাই-বোন এবং আতœীয়-স্বজনদের আনার কোন ব্যবস্থা করতে পারি কিনা চেষ্টা করতে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলে এসেছি’।
পাঠকের মতামত