উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
জাতীয়করণ হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাড়ানো হয়েছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা। এরপরও শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন এবং শিক্ষার মানে হতাশাজনক চিত্র এসেছে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ফলে। এ যেন পর্যাপ্ত সার, পানি ও পরিচর্যা করেও মাঠ থেকে ভালো ফসল ঘরে না তোলার মতোই অবস্থা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, দায়িত্ব পালনে শিক্ষকরা প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল নয়। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। মাঠপর্যায়ের পরিদর্শনেও আছে দায়িত্বে অবহেলা। তাই প্রাথমিক শিক্ষার মানের চিত্র হতাশাজনক, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতিসংঘের এসডিজি অর্জন, সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা, শিক্ষানীতি-২০১০ এবং সরকারের রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার দক্ষ শিক্ষকও নিয়োগ দিচ্ছে। গত আট বছরে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি শিক্ষকদের দক্ষ বানাতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। সরকার স্কুল জাতীয়করণ, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছেনি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা। ক্ষোভ প্রকাশ করে এই কর্মকর্তা বলেনÑ সরকার মাঠে পর্যাপ্ত সার, পানি ও পরিচর্যা করছে অথচ ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে সবাইকে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি করতে হবে।
জানা গেছে, গেল বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ফল খারাপ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। তাদের তথ্যমতে, সমাপনী পরীক্ষায় গত বছর মোট ৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। এগুলোর মধ্যে অস্থায়ী রেজিস্ট্রার অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি, কিন্ডারগার্র্টেন স্কুল ১৫টি, এনজিও স্কুল নয়টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি, নন-রেজিস্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি, ব্র্যাক স্কুল চারটি এবং সাতটি নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই ৫৫টি বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৬৫ ছাত্রছাত্রী। প্রতিটি বিদ্যালয়কেই কারণ দর্শনো চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার মান বাড়াতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার মাঠ প্রশাসনকে। এতে বলা হয়েছে, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান ও গ্রহণে ব্যর্থ হলে শাস্তি পেতে হবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরও। জাবাবদিহি করতে হবে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, ইন্সট্রাক্টরদের। তাদের প্রশিক্ষণও মূল্যায়ন করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শিথিলতা ও সহমর্মিতা দেখালে শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে চিহ্নিত করা হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের ব্যয় করা অর্থ ফেরত দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল আমাদের সময়কে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে নয় দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছেÑ বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা, দৈনিক পাঠ পরিকল্পনা ও পাঠ উপকরণ নিয়ে পাঠদান প্রক্রিয়া কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তোলা। শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার জন্য আগ্রহী করা। শ্রেণিকক্ষে আনন্দঘন সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে স্কুল পরিদর্শন কর্মকর্তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। দায়িত্বশীল হতে হবে প্রধান শিক্ষকসহ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের।
অভিযোগ আছে, অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলে দীর্ঘদিনেও তা খরচ করছে না অনেক বিদ্যালয়। আবার কতিপয় বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আছে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ। তবে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব বিদ্যালয়ে আইসিটি সামগ্রী রয়েছে এগুলো পরিচালনায় শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জন করতে বলা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে ব্যবহারিক ধারণা ও দক্ষতা দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, প্রাথমিক শিক্ষার সব বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, সহকারী উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা ও থানা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইন্সট্রাক্টর, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী দুই কোটি ১৭ লাখ।সুত্র : আমাদের সময়