জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পূর্ব অনুমতি ছাড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফর বা পিকনিকে যেতে পারবে না। কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করলে শিক্ষার্থী বহনকারী গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স সম্পর্কে অবশ্যই বিআরটিএ’র প্রত্যয়ন নিতে হবে। শিক্ষা সফর ও পিকনিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের ৬ দফা নির্দেশনা দিয়ে দু’একদিনের মধ্যে সার্কুলার জারি করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সার্কুলার জারির বিষয়টি দৈনিকশিক্ষাকে নিশ্চিত করে বলেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পিকনিক ও শিক্ষা সফরে যাওয়ার রেওয়াজ চালু দীর্ঘদিন যাবত। আর প্রায়ই শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহনকারী গাড়ির দুর্ঘটনায় পড়ার ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী আহত-নিহতের ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি যশোর জেলায় এমন দুটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার সার্কুলার জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সার্কুলারের খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষা সফরে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ডিসি বা ইউএনওর অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন নেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়ির ফিটনেস ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসের প্রত্যয়ন নিতে হবে। পিকনিক বা শিক্ষা সফরে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই অভিভাবকদের কাছ থেকে সম্মতিপত্র নিতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষা সফর বা পিকনিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আগেই ধারণা দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিতে হবে। স্থানীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত যেসব বিধি-বিধান আছে তা সবাইকে যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৫ জানুয়ারি যশোরের চৌগাছার বর্ণি রামকৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী পিকনিকে যাওয়ার পথে তাদের বহনকারী বাস উল্টে যায়। এতে স্কুলের সহকারী শিক্ষক জহুরুল ইসলাম, ছাত্রী সুমাইয়া, সাথীসহ ৫ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি সকালে যশোরের বাঘারপাড়ায় যশোর-নড়াইল মহাসড়কে পিকনিকের বাস উল্টো বিশ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা মেহেরপুরের মুজিবনগরে শিক্ষা সফর থেকে ফেরার পথে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চার ছাত্রী ও তিন ছাত্র নিহত হয়। আহত হয় অর্ধ শতাধিক। এভাবে সারা দেশে প্রায়ই পিকনিক বা শিক্ষা সফরে আসা যাওয়ার পথে বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এ ব্যাপারে একজন যুগ্ম-সচিব বলেন, সাধারণত পিকনিকের বাস কেউ ভাড়া করতে গেলে কম খরচের হিসেব কষেন। গাড়ীর মালিকরা এ সুযোগে পুরনোগাড়ীগুলো রং করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে রুটে চলা ভালো গাড়ি দেয়া হয় না। ফলে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে শিক্ষার্থী পরিবহন করা হয়ে থাকে। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এসব ঘটনা এড়াতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় সার্কুলার জারির এ উদ্যোগ নিয়েছে।
সুত্র: দৈনিক শিক্ষা