ওয়াশিংটন ডিসি: শুনতে আশ্চর্যজনক হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। খবরটি হ্ছে এই যে,- হিজড়া এক নারী একটি শিশুকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষকরা বলছেন, এধরনের ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম।
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছর বয়সী এই হিজড়া নারীর (ট্রান্সজেন্ডার) পার্টনার তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে না চাইলে ওই হিজড়া নারী এই কাজটি করতে এগিয়ে যান এবং তিনি এই কাজে সফল হয়েছেন বলে ট্রান্সজেন্ডার হেল্থ নামে একটি সাময়িকীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, বেশ কিছু ওষুধ খাওয়া এবং ব্রেস্ট পাম্পিং-এর পর এটা করা সম্ভব হয়েছে।
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রিটেনে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এটি একটি দারুণ ঘটনা। তিনি বলেন, এনিয়ে গবেষণার পর হয়তো আরো অনেক হিজড়া নারী শিশুকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
ওই নারীর শরীরে গত ছ’বছর ধরে হরমোন থেরাপি চিকিৎসা চলছিলো। কিন্তু লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্যে তার শরীরে কোনো অপারেশন হয়নি।
শিশুটির জন্মের আগে ডাক্তাররা তার বুকে কৃত্রিমভাবে দুধ তৈরির জন্যে তাকে সাড়ে তিন মাস ধরে কিছু চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। সাধারণত যেসব নারী শিশু দত্তক নিয়ে থাকে অথবা নিজের গর্ভে অন্যের শিশু জন্ম দিয়ে থাকে (সারোগেট মা) তাদেরকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এসব চিকিৎসার মধ্যে আছে ব্রেস্ট পাম্পিং, মায়েরা সাধারণত যেসব হরমোন উৎপাদন করে থাকে সেগুলো গ্রহণ করা, দুধ তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত করতে পারে এরকম ওষুধ খাওয়া এবং পুরুষ হরমোন উৎপাদন আটকে দেওয়া।
এসব চিকিৎসার পর ওই হিজড়া নারী শিশুর জন্যে উপযোগী দুধ বের করতে সক্ষম হন। খবরে বলা হয়েছে, প্রতিদিন তার বুকে ৮ আউন্সের মতো দুধ তৈরি হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, নবজাতকের জন্মের পর প্রথম ছয় সপ্তাহ এই বুকের দুধই তার পুষ্টির প্রথম উৎস। এই সময়ের মধ্যেই শিশুর শারীরিক বিকাশ, খাওয়া দাওয়া এবং পেটের ভেতরে খাবারের হজম পক্রিয়া কিরকম হবে সেটা তৈরি হয়।
এই শিশুটির ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, বুকের দুধ খাওয়ার পাশাপাশি তাকে এখন ফর্মুলা দুধও দেওয়া হচ্ছে। কারণ তার জন্যে পর্যাপ্ত বুকের দুধ তৈরি হচ্ছে না।
এই মেয়ে শিশুটির বয়স এখন ৬ মাস। তার ডায়েটের অংশ হিসেবেই তাকে আবার বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজের একজন শিক্ষক হরমোন বিশেষজ্ঞ ড. চান্না জয়াসেনা বলছেন, এই ঘটনা দারুণ একটি ঘটনা।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে তিনি এরকম দু'একটি ঘটনার কথা শুনেছিলেন যেখানে হিজড়া নারীরা বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন তবে এধরনের কোনো সাফল্যের ব্যাপারে কোনো রিপোর্ট তার চোখে পড়েনি।
ড. জয়সেনা বলেন, এখন এসব ঘটনা নিয়ে আমাদের আরো গবেষণা করতে হবে। আমরা যা কিছু জানি সেটা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে হবে। তাদের যাতে স্বাস্থ্যগত অন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি না হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
তবে এই হিজড়া নারীর বুকে দুধ তৈরি হওয়ার জন্যে যতো ধরনের চিকিৎসা চালানো হয়েছে তার সবগুলোরই দরকার ছিলো কিনা সেটা নিয়ে গবেষকরা খুব একটা নিশ্চিত নন।
তিনি বলেন, হিজড়া নারীদের বুকের দুধের ব্যাপারে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।