বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঘটনায় আরও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয় পুলিশ সদস্যকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সদরদপ্তর ) ওবায়দুল হাসান জানান, শোলাকিয়া মাঠের আড়াইশ মিটারের মধ্যে আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটকের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বরতি পুলিশ সদস্যদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সে সময় সন্দেহভাজন এক হামলাকারী নিহত হন বলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান।
গোলাগুলির মধ্যে ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে স্থানীয় এক নারীও আহত হয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিশ্চিত করেছেন।
ঈদের সকালে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনায় শোলাকিয়া মাঠের জামাতে অংশ নিতে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।
অবশ্য আধা ঘণ্টা পর স্থানীয় জামিয়া ইমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা শোয়াইবের ইমামতিতে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
সহকারী পুলিশ সুপার ওবায়দুল হাসান জানান, শোলাকিয়া থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হামলাকারীরা ‘ককটেল জাতীয়’ কোনো বোমা ছোড়ে পুলিশের ওপর্। তবে কারা কেন হামলা চালিয়েছে তা ‘স্পষ্ট নয়’।
ডেপুটি সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান জানান, হামলার পর পুলিশসহ ১০ জনকে আহত অবস্থায় কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে জহুরুল হক (৩০) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আহত অন্যদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে সাত পুলিশ সদস্যকে ময়মনসিংহ সিএমএইচে নেওয়া হলে সেখানে আসনারুল্লাহ নামে আরেক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয় বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলাম জানান।
তিনি বলেন, “বাকি ছয়জনকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
র্যাব ১৪ এর মেজর সাইফুল সাজ্জাদ জানান, তারা আবু মোকাদ্দেল নামের এক হামলাকারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
এছাড়া পুলিশ আরও দুইজনকে আটক করেছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদ জামাতে অংশ নিতে অনেকেই আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে মাঠে আসছিলেন। এ সময় স্কুল ফটকের কাছে বসানো পুলিশ চেকপোস্ট লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
শোলাকিয়া মাঠ থেকেও ওই শব্দ পাওয়া যায়। মাঠে যাওয়ার পথে সামনে বিস্ফোরণ আর ছুটোছুটি দেখে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা।
হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলে একটি টেলিভিশনের খবরে জানানো হলেও হামলাকারী কয়জন ছিল সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করলে উভয় পক্ষে গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে অজ্ঞাতপরিচয় এক সন্দেহভাজন নিহত হন।
পরে তিন প্লাটুন বিজিবি ও র্যা বের একটি দল পুলিশের সঙ্গে ওই অভিযানে যোগ দেয়।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- এসআই নয়ন মিয়া এবং কনস্টেবল প্রশান্ত, জুয়েল, রফিকুল, তুষার ও মশিউর।
এছাড়া আব্দুর রহিম, হৃদয় ও মোতাহার নামের তিন পথচারীকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর ঐতিহ্যবাহী এ ঈদগাহে প্রতি ঈদে নামাজ পড়তে আসেন লাখো মানুষ।
মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ সালে এই ঈদগাহ চালু করেন। প্রথম জামাতে সেখানে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। পরে উচ্চারণের বিবর্তনে তা পরিণত হয় আজকের নাম শোলাকিয়ায়।
ঈদ জামাতে দূর দূরান্ত থেকে মুসুল্লিদের আসার সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২০ জন নিহতের পর এবার দেশের প্রধান সব ঈদ জামাতেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
শোলাকিয়াতেও ওয়াচ টাওয়ার থেকে এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
ঈদের সকাল থেকে ঈদগাহ মাঠ ও আশপাশের এলাকায় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক র্যাব ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন ছিলেন বলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।