আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্বার্থন্বেষী মহল। আশংকা করা হচ্ছে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হবে নির্বাচনের মিছিল-মিটিং ও জনসভায়। বিষয়টি মাথায় রেখে আগে থেকেই প্রস্তুুত প্রশাসন। কেউ তাদের ব্যবহার করলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। এদিকে রোহিঙ্গাদের মাঝেও অনেকের প্রত্যাশা তাদের কাউকে যেন এই কাজে ব্যবহার করা না হয়।
নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের অভিযোগ অনেক পুরোনো। রোহিঙ্গাদের আশ্রিত জীবনের সুযোগ নিয়ে প্রলোভনে ফেলে নানা অপকর্মে ব্যবহার করছে স্বার্থন্বেষীরা। ঠিক তেমনি এবারের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মিছিল-মিটিং ও জনসভায় রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের আশংকা থাকায় আগে থেকেই প্রস্তুুত প্রশাসন। এদিকে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা বলছেন বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে ঋণী করেছে, তার মধ্যে এই দেশের নির্বাচনে জড়ানো তাদের কোনভাবেই উচিৎ হবেনা। তাদের প্রত্যাশা এই কাজে যেন কোন রোহিঙ্গা না জড়ায়, পাশাপাশি কেউ যেন তাদের ব্যবহারের চেষ্টা না করে।
উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের আব্দুর রশিদ জানান, ‘প্রাণ বাঁচানোর জন্য মিয়ানমার থেকে এই দেশে পালিয়ে এসেছি। এই দেশ আমাদের ফিরিয়ে না দিয়ে দিয়েছে আশ্রয়। তাদের মানবতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। সুতরাং এই দেশের বিশৃংখলা হয় এমন কোন কাজে আমরা জড়াতে পারবনা। পাশাপাশি আমাদেরকে যেন কেউ এই কাজে ব্যবহার না করে’।
বালুখালী ক্যাম্পের হামিদুল ইসলাম জানান, ‘আমরা রোহিঙ্গা। আমরা এই দেশের নাগরিক নই। সুতরাং এই দেশের নির্বাচনের মিছিল-মিটিং এ যাওয়া আমাদের উচিত নয়। কেউ যেন টাকার বিনিময়ে এই কাজে না যায়। এছাড়া রোহিঙ্গাদেরও যেন কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রশাসনের।
কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন (৯ নং ওয়ার্ড) জানান, পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে নির্বাচন ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের আশংকা রয়েছে। এই কাজে না জড়ানোর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রচেষ্টা ও প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন সহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। এই আশংকার বিষয়টি তিনি আগে থেকেই অবগত। তাই ক্যাম্পের ভিতরে-বাইরে তল্লাসি চৌকি বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। যেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পেই অবস্থান করে।
নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার শঙ্কার কথা স্বীকার করেই শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানান, এক মাস আগে থেকেই নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন ভাবেই যেন রোহিঙ্গাদের এই কাজে জড়ানো না হয় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সেই সাথে নির্বাচন মৌসুমে রোহিঙ্গাদের ব্যস্ত রাখতেই নেয়া হয়েছে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। নির্বাচনের দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলবে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, রোহিঙ্গারা এই দেশে আশ্রিত। সুতরাং যারাই রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার উদ্যোগ নেবে, যথাযথ প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান। নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করা আইনীভাবে অবৈধ। যারা এই কাজে রোহিঙ্গাদের জড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত