শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম দিনে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সচিবালয়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের দফতরগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিও বেশ কম, গা ঢাকা দিয়েছেন মন্ত্রী-এমপিরা। যারা এসেছেন, তাদের মধ্যেও বিরাজ করছে আতঙ্ক-ভয়।
সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে।
এর আগে সরকারি অফিস সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সাধারণ ছুটি বাতিল করে অফিস আদালত শুরু হলেও সকালে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ।
আজ সচিবালয়ের প্রবেশের ‘পাস’ বাতিল করা হয়েছে। সচিবালয়ের মূল ফটকে খুব অল্প সংখ্য পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তবে তাদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন সেনা সদস্যরা। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফতরের সামনে পুলিশের পাশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। যারাই সরকারে আসবেন, তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো। বর্তমানে সচিব মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী এদিন সকাল ৯টা থেকেই সচিবালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেক সচিবই অফিসে এসেছেন। তবে তারা নিজেদের মধ্যে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেই সময় পার করছেন। সিনিয়র সচিবরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে শোকাবহ আগস্ট মাসকে কেন্দ্র করে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন দফতর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নামের ফলক এখনও আছে।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় (সাড়ে ১১টা) সচিবালয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর নিয়ে জানা যায়, গতকাল রাতেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেইসঙ্গে চালানো হয় লুটপাট ও ভাঙচুর। মঙ্গলবার সকালের আওয়ামী লীগের অফিসের কার্যালয়ে দেওয়া আগুনে পোড়ার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে সচিবালয় থেকে। এতে করে কর্মকর্তা-কর্মচারী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
অনেকেই আতঙ্কে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া কর্মচারীদের মধ্যে গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে, যে অফিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ মনে করছেন, এই অবস্থায় সচিবালয় থেকে বেরিয়ে গেলে, দুর্বৃত্তরা সেটার সুযোগ নিতে পারে। আর এতে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই তারা কার্যালয়েই অবস্থান করার পক্ষে।