তেঁতুলের ছবি দেখেই হয়তো অনেকের জিভে জল চলে এসেছে। ফলটি এমনই, দেখলে যেকারও জিভে জল আসে। এ ফলটির রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রকৃতিক উপাদানে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, ই এবং বি। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ডায়াটারি ফাইবার। এখানেই শেষ নয়, একাধিক শক্তাশালী অ্যান্টিঅক্সিডন্টেরও দেখা মেলে এই ফলে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে, ত্বকের পরিচর্যায় এবং আরও নানা শারীরিক উন্নতিতে এই ফলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রোগমুক্ত সুস্থ শরীর পেতে সপ্তাহে কম করে ৩-৪ দিন জমিয়ে তেঁতুল খাওয়ার কথা জানিয়েছে জীবনধারা বিষয়ক সাময়িকী বোল্ডস্কাই।
চলুন তেঁতুলের নানাবিধ উপাকারিতার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
১. দেহের ভেতরের প্রদাহ কমায়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শরীরের ভেতরে ইনফ্লেমেশন বাড়তে শুরু করলে ধীরে ধীরে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপরই খারাপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানা রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। সেই সঙ্গে জয়েন্টের সচলতা কমে যাওয়ার কারণে নড়াচড়া করার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। আর সবথেকে ভয়ের বিষয় হলো শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়ছে কিনা, তা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়। তাই তো নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
২. ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
সরাসরি না হলেও প্ররোক্ষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল দারুণভাবে কাজে এসে থাকে। আসলে এই ফলে থাকা বেশ কিছু এনজাইম, কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৩. নার্ভের কর্মক্ষমতা বাড়ে
বি কমপ্লেক্স হলো এমন ভিটামিন, যা ব্রেন ফাংশনের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নার্ভ সেলের শক্তি বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কগনেটিভ ফাংশনে উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে।
৪. হার্ট চাঙ্গা হয়ে ওঠে
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত যে তেঁতুলে থাকা একাধিক ভিটামিন এবং খনিজ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্তে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর হার্টের কর্মক্ষমতা কমাতে ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল কোনো কমতিই রাখে না। তাই শরীর যখন এই দুই ক্ষতিকর রোগ থেকে দূরে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার কোনও সুযোগই থাকে না।
৫. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
স্ট্রেস, পরিবেশ দূষণ এবং অতি বেগুনি রশ্মির মারাত্মক প্রভাবের কারণে সবারই সৌন্দর্য কম-বেশি কমে যেতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে স্কিন টোনকে ধরে রাখতে এবং ত্বককে নরম এবং সতেজ বানাতে তেঁতুলের কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। এই কারণেই তো নিয়মিত তেঁতুল দিয়ে বানানো ফেস প্যাক মুখে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে
প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে তেঁতুলে খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে শুধু সংক্রমণ নয়, ছোট-বড় কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
৭. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়
তেঁতুলে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে হজম শক্তির বৃদ্ধি ঘটতে একেবারে সময় লগে না। এখানেই শেষ নয়, তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় "বিলিয়াস সাবস্টেন্স" যা খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে বদ-হজমের আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৮. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে
মশলা হিসেবে তেঁতুলকে কাজে লাগালে শরীরে হাইড্রোক্সিসিট্রিক অ্যাসিড বা এইচ সি এ-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই উপাদানটি শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে সার্বিকভাবে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে ক্ষিদে কমে যায়। আর একবার কম খাওয়া শুরু করলে ওজন কমতে সময় লাগে না।
৯. রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা শরীরে লহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনটা হওয়ার কারণে একদিকে যেমন প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি অ্যানিমিয়ার মতো রোগও দূরে পালায়।